নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে ধানের কাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়ায় লোকসানে কৃষকরা। তাদের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটতে আসা শ্রমিকরাও। আগাম ঢলে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে আধা পাকা ধান কাটায় এমন ক্ষতিতে পড়েছেন চাষিরা। তার ওপর ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকসহ শ্রমিকরাও।
এদিকে হাওরের কৃষকদের প্রতি ধানের জাত বদলের আহ্বান কৃষি বিভাগের।
হাওর ঘুরে দেখা গেছে, টানা কয়েক সপ্তাহের পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীর ধনু নদসহ বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে নদীর তীরবর্তী কয়েকশত হেক্টর ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে ছোট বড় বেশ কটি ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ। যদিও গত দুদিন ধরে ধনু নদের পানি কিছুটা কমেছে বলে জানা গেছে।
তারপরও শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যে কারণে শেষ রক্ষার ভয় এখনো রয়েছে কৃষকের। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে ফসল ডুবির আশঙ্কায় ইতোমধ্যে আধা পাকা ধানই কেটেছেন হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ চাষি।
এরই মধ্যে হাওরের প্রায় ৭০ ভাগ ধান কেটে ফেলেছেন কৃষকরা। কিন্তু ধানের ফলন হয়েছে অর্ধেক। তার ওপর চিটা হয়ে গেছে ধানে। এমন দুর্যোগের মাঝে ন্যায্যমূল্যও পাচ্ছেন না তারা। এই অবস্থা শুধু কৃষকেরাই নয়। চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাওরে ধান কাটতে আসা শত শত শ্রমিক।
কষ্ট অনুযায়ী তাদের পারিশ্রমিকও কম। পাকা ধান কেটে ফেলায় এই অবস্থা হয়েছে বলে জানান রংপুর জেলা থেকে ধান কাটতে আসা শ্রমিকরা। তারা বলেন, ‘বাজারে ধানের মূল্য কম, ব্যাপকভাবেই লোকসানে পড়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। কোনোভাবেই উৎপাদন ব্যয় উঠেছে না তাদের কারোরই।’
এদিকে কৃষকদের অভিযোগ, চারা রোপণে খোঁজ নেয়নি কৃষি বিভাগও। কৃষক কৃষাণীরা বলছেন, কৃষি বিভাগ তাদের সময় থাকতে পরামর্শ দিলে সে অনুযায়ী বীজ রোপণ করতে পারতেন তারা।
ওপরদিকে হাওরের ধানের জাত পুরনো হয়ে যাওয়ায় ফলন কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ এফ এম মোবারক আলী।
তিনি ২৮ ব্রি ও ২৯ ব্রি ধানের জাতের বদলে ৮৮ এবং ৮৯ জাতের ধান রোপণের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ২৮ ধানের বয়স হয়ে গেছে ২৬ বছর। যে কারণে ফলন এখন কম হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এগুলোর কমে গেছে। সেইসাথে প্রকৃতিকগতভাবেই ১০ থেকে ১৫ ভাগ ধানে চিটা হয়ে যাবে। কাজেই চিটা পাকিয়ে কাটলে এগুলো ঝড়ে যাবে। ২৮ ব্রি ধান চাষ করতে থাকলে দিন দিন ক্ষতিগ্রস্তই হবেন কৃষকরা। তাই আগামীতে তিনি ওগুলোর বিকল্প ধান ব্রি ৮৮, ব্রি ৮৯ চাষ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
হাওরাঞ্চলের আবাদটা ত্রিমুখী বিপদের মধ্যে বলে জানান এফ এম মোবারক আলী। তিনি বলেন, ‘বেশি আগাম লাগালে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হবে, দেরিতে হলে আগাম ঢলে তলিয়ে যাবে, আবার সর্ট ডিওরেশনের হলে ফলন কম হবে। কাজেই ধনু নদের পাড়ে কির্তনখোলা বেড়িবাঁধ স্থায়ী করার বিকল্প নেই।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ