নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে ছোটদের বিরোধ বড়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগি জুনায়েদ হাসান ওরফে রিমনকে (১০) খেলার ছলে ডেকে নিয়ে গামছা দিয়ে মুখ চেপে ধরে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। শনিবার (১৬ এপ্রিল) উপজেলার নয়নগর ৬ নং ওয়ার্ডের বাগমারা ধান ক্ষেতে এ ঘটনা ঘটে।
পরে একে একে হত্যার সাথে জড়িত মূল হোতাসহ চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতাররা হলেন মো. ইমন (১৭), মো. আল আমিন (৩৫), মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে বাবু (২৫) ও মো. মানিক মিয়া (৪২)।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে পিবিআই এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, ‘১৬ এপ্রিল জুনায়েদ হাসান ওরফে রিমন সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরের দিন সকালে বাদীর বাড়ির পার্শ্ববর্তী ধান ক্ষেতের মধ্যে থেকে জুনায়েদের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন মৃত ভুক্তভোগি জুনায়েদ হাসান ওরফে রিমন এর বাবা বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে ২৩ এপ্রিল মামলাটি পিবিআই তে হস্তান্তর করা হয়। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পিবিআই এর কর্মকর্তারা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে জড়িত মূলহোতাসহ চার জনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের পরে আসামি ইমন (১৭) জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ঘটনার দুই দিন আগে বৃহস্পতিবার আসামি আল আমিন (৩৫) এর ভাইয়ের ছেলে তানজিন (৭) এর সাথে মৃত জুনায়েদ ওরফে রিমন খেলার ছলে ইটের টুকরা দিয়ে ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে বিরোধ তৈরি হয়। এর এক পর্যায়ে ছোটদের ছাপিয়ে বড়দের মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়। এ নিয়ে গ্রেফতার আসামি আল আমিন এবং তার ভাই আনোয়ার হোসেন ওরফে বাবুর মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, ‘ঘটনার আগের দিন শুক্রবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত আসামি আল আমিন এবং তার ভাই আনোয়ার হোসেন ওরফে বাবু এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার জন্য ইমনকে (১৭) এক হাজার টাকার প্রলোভন দেখিয়ে রাজী করায়। সে খেলার ছলে ভুক্তভোগি জুনায়েদ ওরফে রিমনকে একা নির্জন স্থানে আনার জন্য রাজী হয়।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে জানায়, ‘প্রতিদিনের মত ঘটনার দিন ভুক্তভোগি জুনায়েদ ওরফে রিমন স্কুল শেষে তার সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলার জন্য বাড়ির পাশের বাগমারা চকে (ধানক্ষেতের উচু জায়গা) যায়। সেখানে ইমনও যায়। কিছুসময় খেলাধুলার পরে অন্যরা সেখান থেকে চলে যায়। তবে বক শিকারের কথা বলে ভুক্তভোগি জুনায়েদ ওরফে রিমনকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করে ইমন। পরে দুপুর আড়াই টার সময় ইমন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগিকে চক থেকে খানিকটা দূরে ধানক্ষেতের আইলে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল আসামি আল আমিন এবং তার ভাই আনোয়ার হোসেন ওরফে বাবু। ভুক্তভোগি জুনায়েদ তাদের কাছাকাছি আসলেই আল আমিন তার কোমর থেকে গামছা বের করে জুনায়েদের মুখ চেপে ধরে। সেই সাথে ইমন তার হাতে থাকা চাকু (ছুরি) দিয়ে জুনায়েদের গলায় উপর্যুপরি আঘাত করে। এই অবস্থায় জুনায়েদ হাত-পা ছোরাছুরি করলে আনোয়ার হোসেন ওরফে বাবু তার পা চেপে ধরে এবং ইমন হাত চেপে ধরে। মৃত্যু নিশ্চিত করে তিন জনে ধরাধরি করে পাশের ধানক্ষেতে লাশ ফেলে চলে যায়।
লাশ উদ্ধারের ব্যাপারে জানায়, ঘটনার দিন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও জুনায়েদের সন্ধান না পেয়ে তার স্বজনরা (বাদী) আসামিদের পরামর্শে কবিরাজের কাছে যায়। সেখানেও কাজ না হলে বাড়ি ফিরে আসে। পরের দিন ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০ টায় বাগমারা চকের ধানক্ষেতে আবার খুঁজতে গেলে ধানক্ষেতের সেচকর্মীরা কয়েকটি শেয়াল ঘোরাফেরার তথ্য দেয়। এর সূত্র ধরে ধানক্ষেতের ভেতরে তার ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল