জয়পুরহাটের কালাইয়ে জমাজমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের ওপর প্রতিশোধ নিতে স্ত্রী শিপন আক্তারকে (৪৫) গলা কেটে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে স্বামী । গত রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেস্ট আতিকুর রহমানের আদালতে ওই ঘটনায় জড়িত পিতা-পুত্রকে হাজির করা হয়। সেখানে স্বামী তোজাম হোসেন সরকার জানান, প্রতিশোধ নিতে আমি নিজেই গলা কেটে হত্যা করেছি আমার স্ত্রীকে।
সোমবার সকালে সাংবাদিকদের এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গৃহবধূ শিপন আক্তারকে গলা কেটে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন স্বামী ও তার গর্ভের সন্তান শিহাব (২০)। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত গৃহবধূর ভাই শাহজাহান আলী হয়ে বাদী পিতা-পুত্রকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন কালাই থানায়।
ঘাতক স্বামী কালাই উপজেলার দুধাইল-নয়াপারা গ্রামের মৃত আলেক উদ্দিন সরকারের ছেলে তোজাম হোসেন সরকার (৫২) এবং গৃহবধূর গর্ভের সন্তান শিহাব উদ্দিন (২০)। গত শনিবার সকালে এই ঘটনার পর পুলিশ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য জানতে তাদেরকে থানায় নিয়ে আসলে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য বের হয়ে আসে পিতা-পুত্রের মুখ থেকে।
গত শুক্রবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময়ে দুধাইল-নয়াড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার সকালে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পূর্ব শত্রুতার জেরে ওই গৃহবধূকে দুর্বৃত্তরা গলা কেটে হত্যা করেছে বলে প্রথমে পিতা-পুত্র মিলে অভিযোগ তোলেন। তাদের এমন কথায় হত্যাকাণ্ডে ক্লু খুঁজতে মাঠে নামেন সিআইডি ও ডিবিসহ পুলিশের একাধিক টিম।
গৃহবধূর স্বজন, প্রতিবেশী ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৭/৮ বছর পূর্বে প্রতিবেশী আয়নাল হকের ছেলে আহসানের নিকট থেকে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন নিহত গৃহবধূর স্বামী তোজাম হোসেন সরকার। এখনো ওই জমির দলিল হয়নি। বর্তমানে জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রেতা সেই জমি দলিল করে দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের মধ্যে বেশকিছু দিন ধরে ঝগড়া বিবাদ চলছিল। জমি উদ্ধার এবং প্রতিবেশীসহ আরও বেশ কয়েকজনকে উচিত শিক্ষা দিতে গৃহবধূকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার স্বামী ও সন্তান। যথারীতি শুক্রবার রাতে খাবারের পর ঘরের দরজা খোলা রেখে গৃহবধূ শিপন আক্তার তার ৮ বছর বয়সের ছোট ছেলে তুহিনকে নিয়ে নিজ শয়নকক্ষে শুয়ে পড়েন। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় ছেলে শিহাব ও তার বাবা অন্য একটি ঘরে শুয়ে পড়েন। রাতের কোনো এক সময়ে বাবা ও ছেলে মিলে গৃহবধূর কক্ষে প্রবেশ করে তাকে হত্যা করার পর ঘরের মেঝেতে মরদেহ ফেলে রাখেন। পরে তারা পুলিশে খবর দিলে মৃতদেহ উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের মর্গে পাঠান।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই প্রতিবেশীদের অভিযোগ ছিল, নিরপরাধ লোকজনদের ফাঁসাতে বাবা ও ছেলে মিলে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই তারা গৃহবধূর স্বামী এবং ছেলেকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুরোধ করেছিল প্রশাসনের নিকট।
মামলার বাদী শাহজাহান আলী বলেন, জমির বিরোধে প্রতিশোধ নিতে পিতা-পুত্র মিলে আমার বোনকে হত্যা করেছে। ওদের দু’জনের কঠিন শাস্তির দাবি করছি আমি।
কালাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মঈনুদ্দী জানান, পিতা-পুত্র মিলে গৃহবধূকে হত্যা করেছে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে। কিন্তু আদালতে তাদেরকে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় নিহতের স্বামী তোজাম হোসেন সরকার একাই তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে এমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা