বর্ষা মৌসুম আসছে। বগুড়ার যমুনা নদীর দুই কূল পানিতে ভরে যাবে। নদী পারাপারে নৌকায় হবে একমাত্র ভরসা। এজন্য বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে যমুনা নদীর পাড়ে নৌকা মেরামত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকার মাঝিরা। নৌকার কারিগরদেরও ডাক পড়েছে। হয়ে পড়েছেন ব্যস্ত। নদী পাড়ে পানি বাড়ছে, আর নৌকা মাঝিদের কর্ম চঞ্চলতা ফিরে পেতে মুখিয়ে আছে মাঝিরা। যমুনা নদীর দুই পাড় মিলেয়ে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার যাত্রী পরাপার হয়ে থাকে।
জানা যায়, বগুড়া জেলা রয়েছে যমুনা, বাঙালি, করতোয়া, ইছামতী প্রভূতি নদী। বন্যার সময় এসব নদীগুলোর অববাহিকায় বসবাসরত এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য একমাত্র যানবাহন হয়ে ওঠে নৌকা। বিশেষ করে যমুনার চরাঞ্চলের লোকজনের বন্যায় প্রধান বাহন হলো নৌকা। যমুনায় পানি বাড়ার সাথে সাথে আসন্ন বন্যার আশঙ্কায় চরবাসী এখন নতুন নৌকা তৈরি এবং পুরাতন নৌকা মেরামত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বেড়েছে কারিগরদের কদর।
বগুড়া সারিয়াকান্দির পৌর এলাকার গার্লস স্কুল মোড়, পারতিত পরল নৌঘাট, কালিতলা নৌঘাট, মথুরাপাড়া নৌঘাট, রৌহাদহ নৌঘাট, চালকান্দি নৌঘাট, শাহানবান্ধা নৌঘাট, ডাকাতমারা নৌঘাট, জামথল নৌঘাট, চরদলিকা নৌঘাট, মানিকদাইড় নৌঘাট, শংকরপুর নৌঘাট প্রভূতি নৌঘাটগুলোতে এখন নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। কারিগররা পুরাতন নৌকা ঘাটে নিয়ে মেরামত করছেন। আর নতুন নৌকা তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বগুড়ার সারিয়াকান্দি যমুনা নদীর একেকটি ঘাট থেকে কমপক্ষে ৩০টি করে নৌকা চলাচল করে। এই নৌকাগুলোর মধ্যে পুরাতন ও নতুন নৌকা রয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত নৌঘাট রয়েছে। আর প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার যাত্রী পারাপার হয়ে থাকে। নদীতে এখন পানি বৃদ্ধির কারণে নিয়মিত নৌকা চলাচল করছে।
বগুড়া সারিয়াকান্দির পারতিত পরল গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, আমার বেশ কয়েকটি গরু এবং ১৪টি ছাগল আছে। প্রতিনিয়ত আমার নৌকায় চরে যেতে হয় ঘাস আনতে। পুরাতন হয়ে যাওয়া নৌকা তাই বন্যা আসার আগেই মেরামত করে নেওয়া হচ্ছে।
কাস্টিয়ার চরের নৌকার মাঝি হয়রত আলী জানান, যমুনায় ধীরে ধীরে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বর্ষা মৌসুম এলে নদীতে বন্যা দেখা দেয়। আর সে সময় নৌকার চাহিদা দিগুণ হয়। প্রতি বছর শতাধিক নৌকা মেরামত হয় আবার শতাধিক নৌকা নতুন করে তৈরি হয়ে থাকে। নতুন তৈরি নৌকা দিয়ে বেশিরভাগই যাত্রী পারাপার হয়ে থাকে।
সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর কালিতলা গ্রয়েন বাঁধের আশরাফুল মিয়া জানান, এখন পুরাতন নৌকা মেরামত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আবার নতুন নৌকা তৈরির কাজও চলছে। নতুন তৈরি নৌকা দিন হাজিরায় আবার কেউ কেউ চুক্তিতে কাজ করে নেয়।
নৌকার কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় ডিঙি নৌকা বেশি ব্যবহার হতো। এখন মানুষের প্রয়োজনে বড়বড় নৌকা তৈরি হচ্ছে। এখন আর নাম থাকে না নৌকার। নৌকা তৈরিতে বিশেষ কোনো কাঠ ব্যবহার হয় না। তবে সাধারণত নৌকার ক্ষেত্রে কড়ই, হিজল, মেহগনী কাঠ বেশি ব্যবহার হয়। কেউ কেউ ছোট নৌকা তৈরির ক্ষেত্রে কাঁঠাল গাছের কাঠও ব্যবহার করে থাকে। নৌকা তৈরিতে আলকাতরা, তাড়কাটা, গজাল, পাতাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। ৪ থেকে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করলে একটি ডিঙি নৌকা তৈরি করা যায়। ১২ হাতের নৌকা তৈরিতে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ পরে। নৌকা তৈরিতেই খরচ কম। আবার তৈরি করা নৌকা কিনতে গেলে দাম বেশি পড়ে। সেকারণে বগুড়ার মাঝিরা নৌকা তৈরি করে নেন।
কাজলা ইউনিয়নের মিস্টার আলী বলেন, বিভিন্ন কাজে নৌকাযোগে উপজেলা সদরে যেতে হয়। নদীতে আবার ভালই পানি বেড়ে গেছে। তাই নতুন নৌকা তৈরির জন্য কারিগরদের অর্ডার দিয়েছি।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌর মেয়র মতিউর রহমান মতি জানান, বর্ষ মৌসুমকে ঘিরে প্রতিবছর সারিয়াকান্দি নদী পাড়ের মানুষ নৌকা তৈরি করে। আবার পুরাতন নৌকা মেরামত করে থাকে। যাত্রী পারাপার হতে ভালোমানের নৌকা হলে আয় রোজগার ভালো হয় বলে মাঝিরা নিজ দায়িত্ব থেকে সেটা করে থাকে। আর পৌরসভা থেকে বলা হয়েছে যমুনা নদীতে সবসময় ভালো মানের নৌকা নামাতে হবে। যেন দুর্ঘটনা না হয়। ভালো নৌকা না হলে নদীতে নামানো নিষেধ রয়েছে। দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে মাঝিদের বলা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই