ফরিদপুর জেলা মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক কাজী আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আব্দুস সোবহান, সাধারণ সম্পাদক মো. বেলায়েত হোসেন মিয়া, সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুকুজ্জামান ফকির।
অভিযোগপত্র ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, কাজী আব্দুস সোবহান অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের ফরিদপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক পদটি বাগিয়ে নেন। আব্দুস সোবহানের সাথে আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ-সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি সাধারণ সদস্যের তালিকায়ও তার নাম নেই। মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক পদটি পাওয়ার পর সে নগরকান্দা-সালথা উপজেলায় নিজস্ব বলয় সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ এলাকার মানুষের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।
তারা বলেন, ফরিদপুর-২ আসনটি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেত্রী, প্রেসিডিয়াম মেম্বার, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও তার ছেলে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর হাত ধরে সুসংগঠিত। ফলে আব্দুস সোবহান যে বলয় সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছেন, তাতে করে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে নেতারা জানান, হাইব্রিড, প্রতারক ও জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা কাজী আব্দুস সোবহান কাদের ইন্ধনে মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়কের পদটি দখলে নিয়েছেন, তা খুঁজে বের করলেই তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে। এ বিষয়ে কাজী আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো চিঠির শুরুতে নেতারা অভিযোগ করেন, নগরকান্দার কাজী আব্দুস সোবহান ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে শত কোটি টাকার বিদেশি পণ্য বিনা শুল্কে খালাস করে। সেই স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ার পর কাজী আব্দুস সোবহানের সাজা হয় এবং এক বছর কারাবরণ করেন। জাল ডলার ব্যবসা, চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, এমএলএম ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের সাথে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক কাজী আব্দুস সোবহান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। আমি টাকা দিয়ে পদ কিনে আনিনি। আমাকে পদ দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট গল্প বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন, তারা আসলেই নিজেদের ইচ্ছায় দিয়েছেন নাকি কারো হুমকিতে দিয়েছেন, এটি জানা দরকার।
নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, কাজী আব্দুস সোবহান কখনো আওয়ামী লীগ করেনি। সে দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। ফলে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দলীয় সভানেত্রীর কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সোবহানকে কোনোদিন রাজনীতি করতেও দেখিনি। তাকে আমরা চিনিওনা। সে নগরকান্দা-সালথায় কমিটি করছে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে। যারা গত নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছে, তাদের মৎস্যজীবী লীগের কমিটিতে রাখা হচ্ছে। কমিটি করার বিষয়ে আমাদের সাথে সে কোনো যোগাযোগও করেনি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই