টানা বৃষ্টিতে আবারও পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে রাঙামাটিতে। কখনো ভারি, কখনো মাঝাড়ি আবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত যেন থাকমছেই না পাহাড়ে। এতে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে পাহাড়বাসীর মধ্যে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ধস। শহরের তবলছড়ি, রিজার্ভবাজার এলাকায় ভেঙে পড়ছে সড়ক। এতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যাওযার শঙ্কায় আছে স্থানীয়রা। অন্যদিকে আতঙ্কে পাহাড়বাসীকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। অব্যাহত আছে জেলা প্রশাসনের সতর্কতামূলক মাইকিং। প্রস্তুত আছে ২০টি আশ্রয়কেন্দ্রও। শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরের আশপাশের প্রায় ২৭টি স্থানকে পাহাড় ধসের অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো- চম্পানির মার টিলা, চেংগির মুখ, আব্দুল আলী একাডেমী সংলগ্ন ঢাল, এসপি অফিস সংলগন্ন, মাতৃ মঙ্গল এলাকা, পুলিশ লাইন এলাকা, অফিসার্স কলোনী, এডিসি হিল, দুর্নীতি দমন অফিস এলাকা, দেওয়ান পাড়া, রাজমনি পাড়া, মুসলিম পাড়া, পোষ্ট অফিস কলোনী, নতুন পাড়া, শিমুল তলী, রূপনগর, লোকনাথ মন্দির, আনসার ক্যাম্প এলাকা, উলুছড়া-আলুটিলা, কাঠালতলী মসজিদ কলোনী, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এলাকা, আলম ডর্কিয়ার গর্জনতলী, চম্পকনগর, পাবলিক হেলথ, কাদের ম্যানসন ও গোধূলী আমানতবাগ এলাকা। এসব পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে প্রায় ২৫ হাজারেরও অধিক পরিবার। এসব পরিবারগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে রাতদিন মাঠে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ কমিটির সদস্যরা।
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের এতো সর্তকর্তার পরও পাহাড় ছাড়তে নারাজ ঝুঁকিতে বসবাসরতরা। অবিরাম বৃষ্টিতেও যেন মৃত্যু ভয়ের রেশ মাত্র নেই কারো চোখে মুখে।
পাহাড়বাসী মরিয়ম বেগম বলেন, বৃষ্টি দেখে আশ্রয় কেন্দ্র নয়, চাই নিরাপদ বাসযোগ্য স্থান। তবেই ছাড়বো পাহাড়। একই দাবি রূপ নগরের বাসিন্দা মো. কবির হোসেনের। তিনি বলেন ২০১৭ সালে এ রূপনগর মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়। অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের এখনো পুনর্বাসন করেনি সরকার। তাই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে পাহাড়ে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে প্রাণহানি এড়াতে মাঠে নেমেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। রাঙামাটি পৌরসভার জনপ্রতিনিধি কালায়ন চাকমা বলেন, এতো ঝুঁকির মধ্যে পাহাড়বাসী আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চায় না। অবাধ্য মানুষকে বুঝানো মুশকিল। আবার কেউ কেউ বৃষ্টি দেখলেই ছুটে যাচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে।
অন্যদিকে রাঙামাটি জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. হুমায়ন রশিদ বলেন, গত তিন দিনে রাঙামাটিতে ১২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আগামী তিনদিন আরও ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল