তৃতীয় দফা বন্যার ভয়াবহ রূপে দিশেহারা সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মানুষ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বাসস্থান, সুপেয় পানি, স্যানিটেশন ও খাবার সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বন্যার্তরা। গেল ক’দিনে বন্যার পানিতে ডুবে নির্মম মৃত্যু হয়েছে শিশুসহ ৫ জনের। বিচ্ছিন্ন ছিল বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট আর যোগাযোগ ব্যবস্থার। আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
গেল শুক্রবার সকাল থেকেই বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত মানুষের বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করে। মুহূর্তেই ধারণ করে ভয়াবহ পরিস্থিতি। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ডুবে যায় উপজেলার পথঘাট-লোকালয়। কোথাও পানি ছুঁয়েছে মাথা পর্যন্ত। পানিবন্দি হয়ে পড়েন লাখ লাখ মানুষ।
এ অবস্থায় গবাদি পশু, আসবাবপত্র, গেল মৌসুমের বোরো ধান গোলায় রেখে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটেন মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্র, স্কুল-মাদরাসা ও বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নেন মানুষ। দেখা দেয় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। নিদারুণ কষ্টে পড়েন বানভাসি মানুষ। এ অবস্থান স্থানীয় প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, জনপ্রতিনিধি ও ব্যক্তি বিশেষের সহায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে পান তারা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তুলনায় তা অপ্রতুল।
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে নির্মম মৃত্যু হয়েছে শিশুসহ ৫ জনের। উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের বাইশঘর গ্রামে বিয়ে থেকে বাড়ি ফেরার পথে নৌকা থেকে পড়ে নিখোঁজ হন ওই গ্রামের কিয়াছত আলীর স্ত্রী লিমা বেগম (৩৫) ও শ্যালিকা সিমা বেগম (২৫)। বিকালে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা করেন স্থানীয়রা।
একই দিনে পানিতে ডুবে মারা যান দৌলতপুর ইউনিয়নের সিংরাওলী গ্রামের ইয়াসিন আলীর ছেলে আলতাবুর রহমান (৪৫), খাজাঞ্চী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা শামীম আহমদ (৬০)। তিনি ওই সময় বাড়ি ফিরছিলেন। পানির স্রোতে তাকে টেনে নিয়ে গেলে নিখোঁজ হন তিনি। পরে তার নিথর দেহ সুরমা নদীর তীরবর্তী মীরেরগাঁও থেকে উদ্ধার করা হয়।
একই ভাবে মারা যান খাজাঞ্চী ইউনিয়নের চন্দ্রগ্রাম গ্রামের অমর চন্দ্র দাসের ছেলে অনিক দাস উরফে মোহন দাস (২০)। বাড়ি থেকে সিলেট শহরে যাবার পথে পার্শ্ববর্তী গ্রামের মসজিদের সামনে পানির তোড় ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাকে। ওইদিন উপজেলা হাসপাতাল থেকে মায়ের সাথে বাড়ি ফিরছিল এক শিশু কন্যা। পথিমধ্যে নৌকা ডুবলে নিখোঁজ হয় সে। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত তার সন্ধান জানা যায়নি।
এদিকে গেল সোমবার বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে জেনারেটর বন্ধ করতে গিয়ে সাব্বির (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। সে স্থানীয় রাজধানী রেস্টুরেন্টে কর্মরত ছিল। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লক্ষ্য ৮৯ হাজার ৩২০ জন মানুষ। আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন ২৮ হাজার ৯৬০ জন।
এ বিষয়ে কথা হলে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে বলেন, গেল কয়দিনেও বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন মানুষ। যদিও পথঘাট কিছুটা চলাচলের উপযোগী হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ৩০ মেট্রিকটন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ৭ লক্ষ টাকা সরকারীভাবে বরাদ্দ হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর