২৮ জুন, ২০২২ ১৬:৪১

বগুড়ায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু থাকলেও দাম চড়া

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু থাকলেও দাম চড়া

কোরবানির ঈদের সময় ঘনিয়ে আসছে। তাই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। বগুড়ার হাটে হাটে আগের থেকে বেশি গরু ছাগল উঠতে শুরু করেছে। জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু থাকলেও এবার দামও বেশ চড়া। গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু পালনে খরচ বেড়েছে। এদিকে দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা আরো অপেক্ষা করছেন, তারা বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখছেন পছন্দের পশু ক্রয় করতে। বগুড়ার হাটগুলোতে বিপুল সংখ্যক পশু আসলেও, ক্রেতা কম, দাম নিয়েও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ হাট বগুড়ার মহাস্থানগড় গরুর হাট। এই হাটের সাথে, ঘোড়াধাপ, সুলতানগঞ্জ হাট, শেরপুর হাট, সাবগ্রাম হাট, পেরী হাট, নামুজাসহ প্রায় শতাধিক স্থানে হাট বসে। এই সব হাটে স্থানীয়ভাবে যেমন কোরবানীর পশু কেনাবেচা হয় ঠিক তেমনি অন্য জেলার জন্যও পশু কেনাবেচা হয়। বগুড়ার খামারীরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারে কোরবানি উপযোগী পশু লালন পালন করে লাভের আশা করছেন। খামারিরা দেশি জাতের প্রচুর গরুর লালন পালন করেছে। খামারিরা এখন কোরবানির হাটকে কেন্দ্রে করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। নিজেদের খামারের গরু, ছাগল, ভেড়াসহ কোরবানি পশু হাটে তোলার আয়োজনে রয়েছে। 

এদিকে বগুড়ার হাটগুলোকে কেন্দ্রে করে মৌসুমি গরুর ব্যাপারীদের আনাগোনা বেড়েছে। গরুর ব্যবসায়ীরা গরু এক জেলা থেকে অন্য জেলার হাটে বিক্রি করে থাকে। গত বছর বগুড়ার হাটগুলোতে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুরের ব্যবসায়ীদের গরু ক্রয় করতে দেখা গেছে। বগুড়া সদরে মোট খামারি রয়েছে ৩ হাজার ৪২০টি। 

এরমধ্যে সবচেয়ে বড় গরুর খামার গড়েছে টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম । তার খামারে কোরবানীযোগ্য পশু রয়েছে ১ হাজার ২২০টি। এই খামারে ষাঁড় আছে ৮৮৫টি। অন্যান্য পশুও কোরবানীযোগ্য করে গড়ে তোলা হয়েছে। 

বগুড়া জেলায় প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়েই অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিজিয়ান, আমেরিকার ব্রাহমা ক্রস, ভারতীয় শাহীওয়াল, নেপালের গীরসহ দেশীয় জাতের গরু ছাগল পালন করে এখন ভালো দামের প্রত্যাশা করছেন খামারিরা। প্রতিবছরই ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন তারা। ছোট-বড় খামারের পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে ৪ মাস যাবত অনেকেই গরু মোটাতাজা করে থাকেন।

খামারিরা বলছেন, চলতি বছর পশুখাদ্যের দাম ও শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় পশুপালন খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ। এতে করে কোরবানির পশুর দাম গত বছরের চেয়ে বেশি।
 
বগুড়ার ধাপের হাট ও মহাস্থান হাট ঘুরে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক ক্রেতা তাদের গরু ছাগল নিয়ে হাটে এসেছেন। তবে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় বেচাকেনা তেমন নেই।
 
পশু বিক্রেতা সামছুল হক জানান, এবার পশু লালন পালনে খরচ বেড়ে গেছে, এজন্য গরুর দামও বেশি। ক্রেতাদের আনাগোনা কম বলে জানান। এছাড়া প্রতিবছর রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা বগুড়ার হাট থেকে গরু ছাগল কিনতে আসেন। এবারও তাদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। কোরবানির ঈদ যত কাছে আসবে হাটে বাজারে ততটা ভিড় বাড়বে।
 
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪৬ হাজার ১৫ জন খামারি মোট ৪ লাখ ২৭ হাজার ২শ’ ৯৫টি গবাদি পশু কোরবানিযোগ্য করে তুলেছেন। এ বছর জেলায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩শ’ ৭৫টি। চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ৬৭ হাজার ৯শ’ ২০টি। এ পশুগুলোর মধ্যে গরু ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭শ’ ৯৮টি, মহিষ ১ হাজার ৭শ ৩৩টি, ছাগল ১ লাখ ২৯ হাজার ৫শ’ ৩৮টি এবং ভেড়া ২৮ হাজার ২শ’ ২৬টি। গেল ঈদে এ জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পশু জবাই করা হয়।

বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করে দেশীয় খাবার খাইয়ে পশু মোটাতাজা করার জন্য কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাজারে দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি থাকায় আশা করছি, খামারি ও কৃষকরা লাভবান হবেন। 

বগুড়ার সবচেয়ে বড় গরুর খামার গড়েছেন টিএমএসএস’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ডঃ হোসনে আরা বেগম। তিনি জানান, বগুড়ায় সবচেয়ে বড় খামার গড়ে তোলা হয়েছে। যাতে করে এই অঞ্চলের মানুষ সুলভ মূল্যে গরু ক্রয় করতে পারে। পবিত্র ঈদুল আযহার ঈদে কোরবানি দিতে পারে।

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর