বগুড়ায় নির্বিঘ্নে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করার সহযোগিতায় মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন। পর্যাপ্ত লবণসহ সব ধরনের উপকরণের সহযোগিতায় পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে পারবে বগুড়ার সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। সরকারিভাবে চামড়ার যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার ন্যায্য মূল্য পেতে জেলা প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। কোনো ব্যবসায়ী সরকারি এ নির্দেশনা না মানলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বগুড়া থেকে কোরবানির পশুর চামড়া অন্য জেলায় যাতে পাচার না হয়, সে বিষয়ে কড়া নজরদারিতে রয়েছে জেলা পুলিশের বিশেষ টিম। এ বিষয়ে দিনব্যাপী বগুড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবে।
জানা গেছে, এ বছর সরকারিভাবে গরুর চামড়ার দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪০-৪৪ টাকা, খাসির চামড়ার দাম ১৮-২০ টাকা ও বকরির চামড়ার দাম ১২-১৪ টাকা ফুট দরে।
এদিকে, কাঁচা চামড়ার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে-কোরবারিনর চামড়া যথাযথ পদ্ধতিতে এবং যথাসময়ে লবণ মেশানো ও সংরক্ষণ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া জনসচেতনতামূলক প্রচারণা ও কোরবানি দাতা কর্তৃক পশুর চামড়ার লবণ প্রয়োগের বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ব্যাপকভাবে প্রচার করেছে। সেই সাথে কাঁচা চামড়ায় লবণ লাগানোর জন্য পর্যাপ্ত লবণের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কোরবানির পশুর হাটে লবণ সরবরাহের জন্য হাটের পাশে অথবা কাছাকাছি স্থানে লবণ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে বিসিক এবং বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতিকে শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া জেলা চামড়া মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের যে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ শত টাকা সেই সাইজের চামড়া ২০১৮ সালের কোরবানির ঈদে বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। এর আগে ২০১৬ সালে বিক্রি হয়েছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। ২০১৯ ও ২০২০ সালেও চামড়ার তেমন একটা দাম ছিল না। ২০২১ সালেও চামড়ার বাজারে তেমন দাম পাননি বিক্রেতারা। এই সমিতির আওতায় সদস্য রয়েছে ৩৮৭ জন। যারা প্রত্যেকেই এবার চামড়া কেনার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে।
বগুড়া শহরের সাতমাথা, চামড়া পট্টি, চকসুত্রাপুর, বাদুড়তলা, চকযাদু ক্রসলেন, থানা মোড়, চেলোপাড়া, শহরের বাইরে ঠনঠনিয়া, কলোনি, বনানী, মাটিডালি, শাকপালাসহ কমপক্ষে একশতটি স্পটে কোরবানির ঈদের দিন চামড়া সংগ্রহ করে থাকে চামড়া ব্যবসায়ীরা।
বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুুল মতিন সরকার জানান, এবছর জেলা শহরে গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪০-৪৪ টাকা, খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা ফুট নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ভালোমানের চামড়া বেশি দামে কেনা হবে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী জানান, পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে ফেসবুক, ইউটিউব, ও অন্যান্য মাধ্যমে গুজব ছড়ানো কিংবা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পুলিশি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বগুড়ায় কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহনে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সতর্কতার সাথে কাজ করা হচ্ছে। বগুড়া থেকে কোনো চামড়া যাতে অন্য কোথাও পাচার না হয়, সে বিষয়েও নজরদারি রয়েছে। পুলিশের বিশেষ টিম পুরো জেলায় পৃথক পৃথকভাবে এ বিষয়ে কাজ করবে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক জানান, কোরবানির চামড়া নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বগুড়ায় চামড়া সংরক্ষণ ও বিক্রিতে সকল প্রকার সহযোগিতায় মাঠে থাকবে জেলা প্রশাসনের কয়েকটি টিম। এবছর স্থানীয়ভাবে চামড়া সংরক্ষণের জন্য সরকার স্থানীয় হাট-বাজারে লবণ সহজলভ্য করেছে। হাটবাজারে লবণ সহজলভ্য করার জন্য বিসিকের প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিম প্রস্তুত থাকবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব গুদামে অথবা প্রশাসনের সহযোগিতায় অস্থায়ী শেড নির্মাণ করে ঈদের প্রথম ৭ দিন চামড়া সংরক্ষণ করবেন। এ বিষয়ে স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
তিনি আরও জানান, মহাসড়কে যানজট নিরসনে ঈদের পর প্রথম ৭ দিন কোরবানির পশুর চামড়া ঢাকাতে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চামড়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষার্থে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই