টাঙ্গাইলে কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে মৌসুমী ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সুদে ও ঋণের টাকায় চামড়া কিনে অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে না পেরে তাদের মাথায় হাত। ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ।
রবিবার টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের পাকুটিয়ার বৃহৎ চামড়ার হাটে গিয়ে দেখা যায়, মৌসুমী ও প্রান্তিক চামড়া ব্যবসায়ীরা যে দামে মফস্বল থেকে চামড়া কিনেছেন তার অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে পারছেন না। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। এ হাটে গত বছর কয়েক লাখ চামড়া আমদানি হলেও এবার ৫০ হাজারেরও কম চামড়া আমদানি হয়েছে। যে পরিমাণ চামড়া হাটে উঠেছে সেগুলোও কেনার মত ক্রেতা হাটে আসেনি। হাটে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা, নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ থেকে ১০-১২টি কোম্পানির এজেন্ট, ছোট-খাটো কয়েকটি ট্যানারির মালিক ও স্থানীয় কয়েকজন ক্রেতা ছাড়া বড় কোনো কোম্পানীর মালিক বা এজেন্টদের সমাগম ঘটেনি।
চামড়ার বাজারে মন্দাভাবের জন্য খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন পাইকারী ব্যবসায়ীদের। আবার পাইকারী ব্যবসায়ীরা দুষছেন ট্যানারি মালিকদের। তারা বলছেন ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজারের এ খারাপ অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। আর এতে করে খুচরা ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
হাটে আসা ট্যানারি মালিক বা এজেন্টরা জানান, সরকার এ বছর চামড়া কেনার জন্য ব্যাংক লোন ছাড় করেনি। টাকার অভাবে তারা চামড়া কিনতে পারছেন না। সরকার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪২ থেকে ৪৪ টাকা। স্থানীয়ভাবে ছাগলের চামড়া ২২ টাকা থেকে ২৫টা দরে প্রতি বর্গফুট বিক্রির কথা থাকলেও পুরো চামড়া ১৫/২০টাকাও নিচ্ছে না। এত করে চামড়া ফেলে দেয়া ছাড়া উপায় দেখছেন না ব্যবসায়ীরা।
চামড়া না কেনার কারণ হিসেবে তারা জানান, হাট থেকে চামড়া কিনে প্রত্যেকটি চামড়া প্রতি আরও অতিরিক্ত ২০০ টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে ট্রান্সপোর্ট, লবণ, শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচও যুক্ত হবে। ফলে হাট থেকে কেনা চামড়ার দাম ঢাকায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি পড়বে।
হাট ঘুরে দেখা যায় বেছে-বেছে মোটা ও প্রথম শ্রেণির গরুর চামড়া উল্টে-পাল্টে দেখছেন ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দাম-দর করছেন। শেরপুর জেলার মৌসুমী ব্যবসায়ী সুরুজ্জামান জানান, বেশি লাভের আশায় এবার ৪শ' টাকা থেকে শুরু করে ৯শ' টাকা পর্যন্ত চামড়া কিনেছি। কিন্ত হাটে এসে অর্ধেক দামেও চামড়া বিক্রি করতে পারছি না। ঋণ করে ঈদে চামড়া কিনেছি লাভের আশায়। এখন দেখি সবই গুরেবালি।
ফড়িয়া, খুচরা ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা জানান, তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বা স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ করে প্রতি পিস চামড়ার পেছনে খরচ পড়েছে গড়ে ৫০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে মহাজন ও ট্যানারি মালিক ও এজেন্টরা দাম বলছেন ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। অনেকেই ২০০ থেকে ৬০০ পিস করে চামড়া নিয়ে হাটে এসেছেন। প্রতি পিস চামড়ায় লাভের পরিবর্তে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এমন আকাশ-পাতাল তফাৎ হলে চামড়া বিক্রি করা সম্ভব নয়।
তারা জানান, এ ব্যবসায় সারা বছর উপার্জন করা সম্ভব হয় না। বুক ভরা আশা নিয়ে ঈদুল আজহার দিকে চেয়ে থাকতে হয়। এ হাটে চামড়া বিক্রি করে কিছুটা লাভ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার আশায়। এ বছর লাভ তো দূরের কথা চামড়া এবার তাদের পথে বসাবে। তাদের অনেকে মানুষের কাছে ধার-দেনা করে বা সুদে টাকা নিয়ে চামড়া কিনেছেন। এখন চামড়ায় যে ক্ষতি হচ্ছে- তাতে এ ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। সুদ ও ধার করা টাকা পরিশোধ করতে না পারলে গলায় রশি দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তাদের।
আজমীর লেদারের প্রোপ্রাইটর মো. শহীদ উল্লাহ জানান, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত রেটেই সঠিকভাবে চামড়া ক্রয় করছি। তবে অনেকেই আছেন যে দরদাম করে যদি কমদামে কিনতে পারে তবে তারাতো কমদামেই কেনার চেষ্টা করবেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল