নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় ৩০ জুলাই আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে উতপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। ওই সম্মেলন ঘিরে গত রবিবার সন্ধ্যায় জেলা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতে উপজেলা ডাকবাংলো মাঠে আয়োজিত এক প্রস্তুতি সভায় হামলার ঘটনায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এঘটনায় সোমবার দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির আয়োজন করলে পুলিশের বাধায় তা পণ্ড হয়।
পরে বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বের একটি পক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে। ওই হামলার জন্য পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শহিদ হোসেন রুবেলকে দায়ী করেন তারা।
জলঢাকা সরকারি কলেজ শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সম্মেলন আয়োজনে ব্যর্থ হওয়া, পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া সাবেক সভাপতি আনছার আলী মিন্টু এবং সাধারণ সম্পাদক শহীদ হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে। সম্মেলনের আয়োজন ভুলণ্ঠিত করতে সন্ত্রাসী বাহিনী লাগিয়ে তারা ওই হামলা চালায়। হামলায় জেলা নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তরিকুল ও শহিদুল ইসলাম জলঢাকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসময় অসম্মান করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে। এমন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জরিতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
ওই সংবাদ সম্মেলনে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা অধ্যক্ষ এ কে আজাদ, আবু সাঈদ শামীম, আহমেদ হোসেন ভেন্ডার, আব্দুল মজিদ, আব্দুল হান্নান সরকার, আশরাফ আলী, সাবেক যুবলীগ নেতা সারোয়ার হোসেন সাদের, জলঢাকা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান বাবুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
ওই অভিযোগ অস্বীকার করে জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ হোসেন রুবেল বলেন, ‘ওই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সম্মেলন ব্যাহত করতে একটি তৃতীয় পক্ষ হামলা চালিয়েছে। ৩০ জুলাই গঠনতান্ত্রিকভাবে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হউক এটা আমরা চাই।’
১৮ বছরে সম্মেলন আয়োজনের ব্যর্থতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ দায় অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার। আমরা সম্মেলন আয়োজন করতে চাইলেও তিনি নানা ভাবে বাধা দিয়েছেন।’
সাধারণ সম্পাদক শহীদ হোসেন রুবেলকে পদ থেকে অব্যাহতি
এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ হোসেন রুবেলকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ওই অপরাধে সোমবার বিকেলে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যহতির ঘোষণা দেয় জেলা আওয়ামী লীগ।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে ওই ঘোষণা দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত পত্রটি গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক।
জেলা আওয়ামী লীগের ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি হিসেবে গত রবিবার সন্ধ্যায় সভার আহবান করা হয়। ৩০ তারিখের সম্মেলন বানচালের উদ্দেশে ওই সভায় পরিকল্পিতভাবে বহিরাগতদের সমাবেশ ঘটিয়ে জেলা নেতৃবৃন্দকে গালিগালাজ, ভাংচুর এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের শরীরে চেয়ার ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে আহত করা হয়। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও একাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সন্ত্রাসীদের পক্ষ অবলম্বনকারী নেতা হিসেবে শহীদ হোসেনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ সভায় হামলা এবং জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ হোসেন রুবেলকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল