বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে হার্টের ব্লক অপসারণ (এনজিও প্লাস্টি ও স্টেন্টিং) কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মহসীন আহমেদ সোহেলের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক রবিবার শজিমেক হাসপাতালে তিনজন রোগীর স্টেন্টিং (রিং পরানো) ও ৮ জন রোগীর এনজিওগ্রাম সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন।
আগামী ৩ মাসের মধ্যে বগুড়ার এই হাসপাতালের চিকিৎসকগণ অত্যাধুনিক এই চিকিৎসায় সার্বিক সক্ষমতা অর্জন করবেন বলে ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ জানিয়েছেন। এতে করে বগুড়াসহ উত্তরের ১২ জেলার মানুষের হৃদরোগ চিকিৎসা জটিলতার নিরসন হতে চলেছে।
শজিমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ক্যাথলাব স্থাপন করা হয়। ২০০৭ সালে এনজিওগ্রাম শুরুর পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীসময়ে ২০১৬ সাল থেকে আবার এনজিওগ্রাম শুরু হলেও সেটির ধারাবাহিকতা ছিল না। এরই মধ্যে এনজিওগ্রাম মেশিনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। পুরনো মেশিনের বেহাল অবস্থার কারণে ২০১৯ সালে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সিমার্জু মেশিন স্থাপন করা হয়।
কিন্তু এর কিছুদিন পরই করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে এনজিওগ্রাম কার্যক্রম গতিহীন হয়ে পড়ে। ২০২১ সালের মার্চ থেকে পুরোদমে আবারও এনজিওগ্রাম শুরু হয়। তবে এই হাসপাতালে রিং পরানোর ব্যবস্থা ছিলো না। রোগীরা এখানে এনজিওগ্রাম করলেও তাদের রিং পরানোর জন্য ঢাকায় যেতে হতো। একারণে ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর হতে এই হাসপাতালে স্বল্প খরচে রিং পরানো কার্যক্রম শুরু হয়।
আর এই কার্যক্রমে সহযোগিতার হাত বাড়ায় ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট। এখানকার চিকিৎসক, টেকিনিশিয়ান ও নার্সদের এই কার্যক্রমে পারদর্শী করে তুলতে প্রতিমাসে একটি বিশেষজ্ঞ দল বগুড়ায় এসে এখানকার চিকিৎসক ও সহযোগিদের নিয়ে এই কার্যক্রম চালু করেন।
শজিমেক হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. শেখ শহীদুল হক জানান, গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকেই প্রতিমাসে এখানে রিং পরানো কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় রবিবার ঢাকার বিশেষজ্ঞ দলের সহযোগিতায় ৩ জন রোগীর স্টেন্টিং ও ৮ জন রোগীর এনজিওগ্রাম সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়। ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলে ছিলেন ইউনাইটেড হাসপাতালের ডা. কায়সার নাসিরুল্লাহ খান, ডা. আমিনুর রাজ্জাক, ডা. সরিফুল ইসলাম রতন ও ডা. সাইদুর রহমান খান রুমি।
শজিমেক হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ রেজাউল আলম জুয়েল জানান, এক সময় দিনাজপুর হার্ট ফাউন্ডেশন ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনজিওগ্রাম হতো, কিন্তু সেটাও অনেকদিন বন্ধ রয়েছে। এই অঞ্চলে শুধুমাত্র রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এটি চালু। একারণে এই অঞ্চলের গরীব ও সাধারণ মানুষকে অনেক টাকা ব্যয়ে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো। এখন থেকে তাদের আর সেই সমস্যা থাকবেনা। বিশেষ করে রংপুর বিভাগের জেলাসহ বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জসহ ১২ জেলার মানুষ এখানে স্বল্প খরচে শজিমেক হাসপাতালে এই চিকিৎসা নিতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের অন্যতম সদস্য ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ডা. মহসীন আহমেদ সোহেল জানান, এখন থেকে যেহেতু নিয়মিত এই হাসপাতালে এনজিওগ্রামসহ রিং পরানো কার্যক্রম চলবে, সেকারণে আগামী ৩ মাসের মধ্যে তাদের আর এখানে এসে কোন সহযোগিতা করার প্রয়োজন হবে না। এর মধ্যেই বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগ সব সক্ষমতা অর্জন করবে। এতে করে এই অঞ্চলের হৃদরোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সহজলভ্য হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এএ