পটুয়াখালীর গলাচিপায় হতদরিদ্র নারীদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ওয়াবদা বেড়িবাঁধ, ডানিডা, মুসলিম এইড ও চল্লিশ দিন কর্মসূচির কাজের লাখ লাখ টাকা এখনও পায়নি ভুক্তভোগী ওইসব অসহায় নারীরা। আর এ প্রতারণার শিকার হয়েছেন উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের পূর্ব গোলখালী গুচ্ছ গ্রামের ‘সঞ্চিতা ভূমিহীন মহিলা সমিতি’র সদস্যগণ। একাধিক প্রকল্পে কাজ করেও বরাদ্দকৃত মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন হতদরিদ্র এসব নারীরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ওয়াবদা বেড়িবাঁধের কাজের প্রাপ্ত টাকা না পাওয়ায় সমিতির সদস্যদের পক্ষে মোসা. রওসোনা বেগম ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট জেলা প্রশাসকের বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আজও ওইসব ভূমিহীন হতদরিদ্র নারীরা তাদের কাজের বকেয়া মজুরি পায়নি।
সরেজমিনে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াবদা নির্মাণ, ২০১২ সালে ডানিডা, মুসলিম এইড ও চল্লিশ দিন কর্মসূচি প্রকল্পের কাজে অংশগ্রহণ করেন গলাচিপা উপজেলার পূর্ব গোলখালী গুচ্ছ গ্রামের ‘সঞ্চিতা ভূমিহীন মহিলা সমিতি’র সদস্যরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াবদা বেড়িবাঁধ নির্মাণ, মেরামত ও সংরক্ষণে এলাকা ভিত্তিক নারী কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এতে উৎসাহিত হয়ে চল্লিশ জনের ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করে এসব হতদরিদ্র নারীরা। এসকল প্রকল্পে কাজ করেও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা। প্রাপ্ত বকেয়া মজুরি পাওয়ার আশায় আজও তারা ঘুরছেন সংশ্লিষ্ট অফিসের বারান্দায়।
কিন্তু এর সমাধান মিলছেনা কোনভাবেই। আর এ সকল প্রকল্পগুলো অসহায়, দুঃস্থ ও হতদরিদ্র নারীদের অংশগ্রহণে সরকারের গ্রাম উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলছে। কিন্তু এ সমস্ত কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাপ্তিদের অবহেলা, স্বার্থপরতা ও দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন ও নারী অধিকার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার ফলে নারীশ্রমে আগ্রহ হারাচ্ছে হতদরিদ্র নারীরা।
এ বিষয়ে মোসা. রওসোনা বেগম, রিজিয়া বেগম, শোভা রানীসহ সমিতির অন্যান্য ভুক্তভোগী নারী কর্মীরা বলেন, ‘আমরা গোলখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গুচ্ছ গ্রামে থাহি, মোগো দিয়া অব্দার মাডি কাডাইছে। ব্যাংকে নাম নেছে, কাম শ্যাষ অইলে টাহা দিবে। মাডি কাইডা অব্দা বানাইছি। পরে মানুও পাইনা আর টাহাও পাইনা।’
বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মো. সানু মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াবদা বেড়িবাঁধ নির্মাণ, মেরামত ও সংরক্ষণে নারীরা কাজ করেছিল। প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতির কারণে নারীরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এছাড়াও ডানিডা, মুসলিম এইড ও চল্লিশ দিন কর্মসূচির কাজের সাথে জড়িত চেয়ারম্যানদের কেউ মারা গেছেন আবার কেউ এখন জনপ্রতিনিধির দায়িত্বেও নেই। তাই বিষয়টি জটিল হয়ে পড়েছে।’
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর