বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা সরকারি অফিসসূচি মানেন না। আন্তঃবিভাগ এবং বহির্বিভাগের কোনো ডাক্তারের যথাসময়ে অফিসে আসার রেওয়াজ নেই। বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা বিলম্বে অফিসে গিয়ে একটা রাউন্ড দেয়ার পরই কেটে পড়েন প্রাইভেট প্রাকটিসে। জোহরের আজানের পরই কর্মস্থল ছাড়েন অন্যরা। মঙ্গলবার সকালে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুর্নীতি দমন কমিশনের এক অভিযানে হাতেনাতে ধরা পড়ে চিকিৎসকদের অফিস ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি।
সরকারের নতুন সূচি অনুযায়ী, অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টায় শের-ই বাংলা মেডিকেলে অভিযান চালায় বরিশাল দুদকের একটি দল। সহকারী পরিচালক রাজ কুমারের নেতৃত্বে দুদক প্রতিনিধি দলটি সকাল সোয়া ৯টার পরও বিভিন্ন আন্তঃ ও বহির্বিভাগ ঘুরে বেশিরভাগ চিকিৎসককে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পেয়েছেন।
অভিযান চলাকালে সার্জারি বিভাগের প্রধান ও মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাজিমুল হক, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. মাসুম আহমেদ, নিউরো সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলু এবং স্বয়ং পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলামকেও কর্মস্থলে পাননি তারা। বেশ কিছুক্ষণ তারা পরিচালক কার্যালয়ে অবস্থান করেন। এ সময় পরিচালককে মুঠোফোনে কল দেন তারা। পরিচালক ছুটিতে রয়েছেন বলে তাদের জানিয়েছেন। তবে পরিচালক ছুটি নিয়েছেন মর্মে কোনো প্রমাণপত্র পায়নি দুদক কর্মকর্তারা।
পরে দুদক কর্মকর্তারা মেডিকেল কলেজে অভিযান চালায়। সেখানেও সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অনেক শিক্ষককে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পান দুদক কর্মকর্তারা। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষের কাছে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফিঙ্গার বায়োমেট্রিক প্রিন্ট চান তারা। কিন্তু অধ্যক্ষ তাদের ওই প্রিন্ট দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এবং বাদানুবাদ হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ফিঙ্গার বায়োমেট্রিক প্রিন্ট না নিয়েই মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন তারা। দুদকের অভিযানের সময় ভীতি ছড়িয়ে পড়ে পুরো মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে।
এ বিষয়ে জানতে মেডিকেলের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, দুদক কর্মকর্তারা মৌখিকভাবে ফিঙ্গার বায়োমেট্রিকের প্রিন্ট কপি চেয়েছিলেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় তাদের ওই কাগজ দেয়া হয়নি। এ কারণে তারা সিনিয়র চিকিৎসক এমনকি আমার সাথেও দুর্ব্যবহার করে। এতে ডাক্তারদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় বলে তিনি জানান।
এদিকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন অভিযান পরিচালনাকারী দুদক কর্মকর্তারা।
তবে বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক দেবব্রত মন্ডল মৌখিকভাবে বলেছেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সকাল সোয়া ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মেডিকেল হাসপাতাল ও কলেজে অভিযান চালিয়েছে দুদক। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে কিনা সে ব্যাপারে তারা গণমাধ্যমে কিছু বলবেন না।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা