বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাপ বেড়েছে। নবীণ প্রবীন মিলিয়ে এক ঝাক প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রার্থী হতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে নানাভাবে নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন। ভোটারদের সাথে সাক্ষাত করেছেন, দোয়া চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ডিজিটাল ব্যানার টানিয়েছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীরা কেউ বসে নেই চাঙ্গা মনোভাব নিয়ে ভোটারদের কাছে দোয়া চেয়ে সাক্ষাত করছেন।
জানা গেছে, আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বগুড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ১ জন, ১২টি ওয়ার্ডে ১২ জন এবং সংরক্ষিত চার ওয়ার্ডে চার নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন। নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছে ১ হাজার ৬২৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ১ হাজার ২৪০ জন এবং নারী ভোটার রয়েছে ৩৮৩ জন।
১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া জেলা পরিষদের ১২টি ডাকবাংলো, ২টি অডিটোরিয়াম, ২টি লাইব্রেরি ১টি ট্রাক টার্মিনাল, ২৮টি খেয়াঘাট, ২০টি পুকুর, জেলা পরিষদ বিল্ডিং রয়েছে ২টি, অফিসার্স কোয়ার্টার রয়েছে ২টি, উপ-সহকারী প্রকৌশলী কোয়ার্টার রয়েছে ১টি, মোট জমির পরিমাণ ৮৭৩ দশমিক ৪৮ একর। এরমধ্যে দখলে রয়েছে ২৭৩ দশমিক ৩৮ একর, বেদখলে রয়েছে ৬০০ দশমিক ১০ একর। লীজকৃত জমির পরিমাণ ২০ দশমিক ১০ একর।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ব্যস্ত প্রার্থীরা। অনেকেই দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন ফরম ক্রয় করেছেন। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন জেলা পরিষদের সাবেক দুই প্যানেল চেয়ারম্যানসহ হাফ ডজনের বেশি নেতা। তারা বিভিন্নভাবে ভোটারদের নজর কাড়তে ব্যস্ত হয়ে আছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন ঢাকায়। তারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহসহ নেতাদের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন নানাভাবে।
জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. মকবুল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি টি জামান নিকেতা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান দুলু, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান রনি, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. জাকির হোসেন নবাব, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম রাজ, জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান আকন্দ। এদের মধ্যে কয়েকজন দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম উত্তোলনও করেছেন। তবে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন দলের প্রার্থীদের নড়াচড়া নেই বললেই চলে। তাই বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী বা বামদলগুলোর তেমন কোনো প্রার্থীরা আলোচনায় নেই। বিএনপি নেতারা বলছেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না। ২০১৬ সালের জেলা পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নেয়নি বিএনপি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ে রয়েছেন কেন্দ্রের দিকে। অন্য দলের প্রার্থী না থাকায় ধারনা করা হচ্ছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবেন তিনিই হবেন বগুড়া জেলা পরিষদ আগামীর চেয়ারম্যান।
বগুড়া জেলা পরিষদের এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে সবার আগেই মাঠে নেমেছেন জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি। তিনি সকল উপজেলায় চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রসহ ভোটারদের সাথে সাক্ষাত করেছেন।
সুলতান মাহমুদ খান রনি বলেন, বিগত সময়ে বগুড়া জেলা পরিষদের ১নং ওয়ার্ড থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরে প্যালেন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের কারণে পরিষদ পরিচালনার অভিজ্ঞতা হয়েছে। বগুড়া জেলা পরিষদের সম্পদকে কাজে লাগিয়ে জেলা পরিষদের রাজস্ব বৃদ্ধি করাসহ সরকারি উন্নয়নের সুফল জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতেই দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন তিনি।
চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন নবাব বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতিমধ্যেই আবেদন ফরম উত্তোলন করেছি। মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে জয়ী হবো।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু জানান, দলীয় সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই মনোনয়ন দিবেন তাকে বিজয়ী করতে নেতাকর্মীরা কাজ করবে। আমরা দলীয় সিদ্বান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। বগুড়ার ভোটারগণ উন্নয়নের জন্য আ’লীগের প্রার্থীর পক্ষেই রায় প্রদান করবেন।
উল্লেখ, নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৭ অক্টোবর ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। এসব জেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে। এসব ভোটে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। মনোনয়ন বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা যাবে ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল