জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নানা দিক নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রদর্শন ট্রেন জাদুঘর এখন আখাউড়ায় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের ওয়াশ ফিটে রাখা হয় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রদর্শন এ ট্রেন জাদুঘরটি। আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের উপচে পরা ভিড়।
জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। সাধারণ দর্শনার্থীরা টাচ স্ক্রিনে আঙুল স্পর্শ করতেই ভেসে আসছে বঙ্গবন্ধু ছবি, ভাষণ, তার জীবনের নানা দিক-নির্দেশনা।
জাদুঘরটি ঘুরে দেখা যায়, ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯-এর গণআন্দোলন, ৭০-এর নির্বাচন, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুজিব নগর সরকার, মুক্তিযুদ্ধ ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয়ের নানা ইতিহাস নিয়ে সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু রেল জাদুঘর। ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বগিকে সুসজ্জিত করে এ জাদুঘরের রূপ দেওয়া হয়েছে। জাদুঘরটিতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, জীবনকাল আর সংগ্রামী ইতিহাস সংবলিত ভিডিও প্রদর্শন করা হচ্ছে, অডিও সিস্টেমে সম্প্রচার করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।
জাদুঘরটি ভেতরে প্রদর্শনীর মধ্যে আরও রয়েছে, বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ির ছবি, ব্যবহৃত চশমা, দলের প্রতীক নৌকা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় তামাক পাইপ ও মুজিব কোট। এছাড়া মুজিব শতবর্ষের লোগো, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের রেপ্লিকাও রয়েছে। এ জাদুঘরে ১৯২০-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
এ ছাড়া জয়বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা সৃজনশীল একটি বুক শেলফ। সেখানে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী, আমার দেখা নয়া চীন’সহ তার কর্মজীবনের ওপর রচিত গুরুত্বপূর্ণ বই। রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শেখ হাসিনার লেখা বই ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’। ‘জয় বাংলা বুক শেলফে ৮০-১০০টি বইয়ের মধ্যে রয়েছে শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত বিভিন্ন লেখকের বই।
রেলওয়ে সূত্র জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের উদ্যোগে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনগাঁথা ছড়িয়ে দিতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের সূচনা। গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের উদ্বোধন করা হয়। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ জাদুঘর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগস্টের প্রথম দিন থেকে দেশের নানা প্রান্তে যাচ্ছে রেলের দুটি ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর।
শিক্ষার্থী হাসান বলেন, আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর এ জাদুঘরের মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিক সম্পর্কে জানতে পারছি। যা আগে কখনও জানি নাই। মুজিব শতবর্ষ’ উপলক্ষে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এমন উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।
আখাউড়া রেল স্টেশনের সুপারিন্টেনডেন্ট সুপার মো. কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, ভ্রাম্যমাণ এ রেলওয়ে জাদুঘর টির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে। ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত বাঙ্গালি জাতির জন্য যে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে বঙ্গবন্ধু তার সবগুলোই এই জাদুঘরের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ উদ্যোগ ও বিশেষ নির্মাণ বলে আমি মনে করি।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর