ঘনিয়ে আসছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবছেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা। আর এ দূর্গা উৎসবকে সামনে রেখে হবিগঞ্জে ব্যবস্তা বেড়েছে প্রতিমা কারিগরদের। খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করছেন দুর্গাসহ নানা প্রতিমা। জেলার ৯টি উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমান ৭২৯টি মন্ডপে অনুষ্টিত হবে পূজা। তবে দূর্গাপূজাকে সফল করতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসহ প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রাখার দাবী জানান পূজা উৎযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের। এরই মধ্যে পূজার আয়োজন করতে কয়েক দফায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভাও করেছেন তারা। এতে পূজায় যাতে করে শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে, শুধু প্রতিমা আর আলোকসজ্জাতেই নয়, পূজার এই আনন্দকে উপভোগ করতে জেলা শহরের বিপনী বিতানগুলোতেও কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ধুমধাম কেনা বেচা। গত বছর করোনার কারণে তেমন বড় পরিসরে পালিত হয়নি পূজা। তবে এবার করেনার তেমন প্রভাব না থাকায় আনন্দগণ পরিবেশে পূজা উৎযাপিত হবে বলে প্রত্যাশা ভক্তদের। আগামী পহেলা অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সেই হিসাবে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব। এ বছর দেবী দুর্গা আসছেন গজে (হাতি) চড়ে, যাবেন নৌকায় চড়ে। দেবীর আগমনে বিশ্ব হবে শান্তিময়, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে উদয় হবে শুভ শক্তির এমনটাই প্রত্যাশা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের।
সরেজমিনে হবিগঞ্জ শহরের বেশ কয়েকটি পূজা মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা তৈরীতে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই কারিগরদের। কোন কোন কারিগর খড়, কাঠ, সুতা দিয়ে প্রতিমার কাঠামো তৈরি করছেন কেউবা নিপুণ হাতে ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, সরস্বতীসহ নানা প্রতিমা। আবার কোন কোন কারিগরদের প্রতিমা তৈরীর কাজ রয়েছে একেবারে শেষ পর্যায়ে। মূলত প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ করেই শুরু হবে রং তুলির আচড়। কারিগরেরা রং তুলির মাধ্যমে সুন্দর্য ফুটিয়ে তুলবে প্রতিমার।
প্রতিমা তৈরীর কারিগর নিতান্ত পাল জানান, প্রতি বছর এসময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকেন তারা। কারণ দুর্গাপূজা হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় একটি উৎসব। তাই এ উৎসবে প্রচুর প্রতিমা তৈরী করা হয়। আর এতে করে তারা ভাল আয় করে থাকেন। কারিগর পরেশ দাস জানান, বছরের এ সময়টাতেই তাদের ব্যস্ততা বেশি। তাই তারা এখন দিনরাত পরিশ্রম করে প্রতিমা তৈরী করছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তিনিসহ তার সহযোগীরা এ পর্যন্ত ১০ টি প্রতিমা সেট তৈরি করেছেন। প্রতি সেটে দুর্গার সঙ্গে থাকে অসুর, সিংহ, মহিষ, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিক ও লক্ষ্মী প্রতিমা রয়েছে। কারিগর রাজকুমার আচার্য্য জানান, প্রতিমা তৈরীতে আমরা দিন রাত কাজ করছি। কাজ করতে পেরে আমরাও খুশি।
হবিগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায় জানান, এবার জেলায় রেকর্ড পরিমান ৭২৯টি মন্ডপে মন্ডপে পূজা উদযাপিত হবে। পূজার সকল আয়োজন সফল করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দের দফায় দফায় মিটিং হয়েছে। তিনি বলেন, যে কোন অপতৎপরতা রক্ষায় পুলিশ বাহিনী তৎপর রয়েছে। এছাড়াও যানবাহন চলাচলে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। যে সকল স্থানে বেশি মানুষের সমাগম হয় সেই সকল স্থানে বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। শহরের ঘাটিয়া বাজার এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি কট্রোল রুমও খোলা হবে।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে নিজ নিজ ধর্ম সুষ্ঠুভাবে পালনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। শান্তিপ‚র্ণভাবে পূজা উদযাপন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও আনন্দম‚খর পরিবেশে পুজা উদযাপন করার জন্য পুলিশ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনসহ যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ এবার বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি মন্ডপে নিজস্ব সেচ্ছাসেবক ছাড়াও পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও সাদা পোশাকেও পুলিশ মাঠে থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ