শারদীয় উৎসবের খুব বেশি দেরি নেই। সময় একেবারে হাতের কাছে চলে এসেছে। কদিন পরেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গোৎসবকে ঘিরে বাজারে নারিকেল বিক্রির ধুম পড়েছে। পূজায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন খাবারে নারিকেল ব্যবহার হয় বলে এর দামও এখন বেশ বেড়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে নারিকেল বিক্রিতেও ভাটা দেখা দিয়েছে।
বগুড়া শহরের কয়েকটি আড়ত ও খুচরা বাজার ঘুরে জানা গেছে, গত এক বছরের ব্যবধানে নারিকেলের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আকার অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে নারিকেল। গত বছর পূজার সময় নারিকেল বিক্রি হয়েছে বড় আকারের ৮০ থেকে ৯০ টাকা করে। আর মাঝারি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আর ছোট আকারের নারিকেল বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে। চলতি বছর একই সাইজের নারিকেল কিনতে হচ্ছে বড় আকারের ১২০ টাকা, মাঝারি ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর ছোট আকারের নারিকেল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
বগুড়া শহরের রাজাবাজারে নারিকেল কিনতে আসা শিবগঞ্জের মোকামতলার জয় নারায়ণ জানান, তার বাড়িতে সদস্য বেশি। অনেক অতিথিও আসেন পূজায়। এজন্য সাধারণত দুর্গাপূজায় ৫০ পিস নারিকেলের বরাদ্দ রাখেন তিনি। কিন্তু বাজারে এসে নারিকেলের বাড়তি দাম দেখে অবাক হয়েছেন। প্রয়োজনীয় অন্য সামগ্রী কেনার জন্য বরাদ্দ কমে মাত্র ২০ পিস নারিকেল কিনেন।
তিনি বলেন, দাম বেশি, তাই মাঝারি সাইজের নারিকেল কিনেছি। প্রতিটার দাম পড়েছে ৯০ টাকা। এ দিয়ে হয়তো দুর্গাপূজার মেহমানদের সামাল দিতে হবে। বাজারে গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতিটি নারিকেলের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
ফতেহ আলী বাজারের শ্রী দেবনাথ ১১০ টাকা দরে ৩টা নারিকেল কিনেছেন। তিনটি নারিকেল কিনতেই তার খরচ হয়েছে ৩৩০ টাকা। এর সঙ্গে নাড়ু তৈরির আরও সরঞ্জাম রয়েছে। তাতে আরো খরচ বাড়বে। নারিকেলের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তবুও পূজাকে সামনে রেখে এক শ্রেণির ব্যবসায়িরা দাম বাড়িয়েছে।
বগুড়া শহরের চেলোপাড়ার রীতা রানী জানান, পূজায় অনেক কিছুই লাগে। কিন্তু এগুলোর পাশাপাশি আমাদের নারিকেলের ব্যবহারটা বেশি। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে নারিকেলের প্রচুর খাবার তৈরি করা হয়। এজন্য যে যেমন পারে নারিকেল ক্রয় করে। কিন্তু প্রতিবছর দাম বাড়ার কারণে নারিকেল কেনার পরিমাণও কমছে। আগে যারা ১০টি নারিকেল নিত, এখন সেখানে দেখা যাচ্ছে পাঁচটি বা সাতটি নারিকেল দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।
রাজা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান বলেন, গত বছর আকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় নারিকেল বিক্রি হয়েছে। এ বছর সেই দাম হয়েছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। এই দাম বাড়ায় বাজারে ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। পূজার এ সময়টায় যার ১০টা নারিকেল লাগতো, তিনি নিচ্ছেন ৫ থেকে ৬টা।
নারিকেল ব্যবসায়ী সজিব বলেন, নারিকেল নিয়ে সমস্যায় আছি, সামনে পূজা হলেও ক্রেতা কমে গেছে। বিগত দিনের মতো নারিকেল বিক্রি হচ্ছে না। দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নারিকেল কিনছেন খুব কম। কোনোমতে প্রয়োজনটা সেরে নিচ্ছেন।
বগুড়া শহরের চেলোপাড়া এলাকার নারিকেলের পাইকারি আড়তদাররা জানিয়েছেন, বগুড়ায় সাধারণত বাগেরহাট, ফরিদপুর, পিরোজপুরের নারিকেল বেশি আসে। সম্প্রতি ভোলা জেলা থেকেও নারিকেল আসছে। বছরজুড়েই নারিকেলের দাম বেশি। গত বছর থেকে ডাবের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নারিকেলের দামও বেড়ে গেছে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় নারিকেল আনতে পরিবহন খরচ বেশি লাগছে।
পাইকার ব্যবসায়ী হানিফ সরকার জানান, পূজার কারণে নতুন করে দাম বাড়েনি। চলতি বছরের শুরু থেকেই নারিকেলের দাম বাড়তি। যে কারণে পূজার সামনে এসেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। পূজা উপলক্ষে নারিকেলের দাম বাড়েনি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই