সকাল ৮টা। ঘরের মেঝেতে তখনো পানি জমে আছে। বৃদ্ধা আম্বিয়া বেগম (৮২) সামনের খাটে বসে তরকারি কাটছেন। মেয়ে শাহাবানু ও তার সন্তানরা মিলে ঘরের মেঝের পানি সরাতে ব্যস্ত।
সোমবার দুপুর থেকে ভাত খেতে পারেননি তারা। কোনো মতে শুকনো খাবার খেয়ে পার করেছেন সময়। কিন্তু তাতে কী আর শক্তি পাওয়া যায়? প্রশ্ন করেন আম্বিয়া বেগম। বুধবার রাস্তার পাশে ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে তাতে দুপুরের রান্না করবেন বলে জানান। কিন্তু ঘরের চুলা পানিতে ডুবে রয়েছে। কবে রান্না করতে পারবেন তাও ধারণা করতে পারছেন না।
চলাফেরা না করতে পারলেও মেয়েকে দৈনন্দিন কাজে সহায্য করার জন্য তরকারি কেটে দিচ্ছেন। নাতিন জামাই নিয়ে গেলেও সেখানে খাওয়া আর হয়নি। অল্প কিছু শুকনো খাবার খেয়েছেন। শুধু অপেক্ষায় ছিলেন, ঝড় শেষ হলেই আবার চলে আসবেন নিজের ঘরে। সকাল হলে ঘরে এসে দেখেন কাঁচা মেঝে পানিতে ডুবে আছে। ঘরের চুলা, আসবাবপত্র, বিছানা ভিজে গেছে। কোনো রকম পরিষ্কার করে নিচ্ছেন। কিন্তু শঙ্কা রয়ে গেছে আজ (২৬ অক্টোবর) দুপুরের। দুপুরের জোয়ারে আবারও ডুবে যাবে- এমন শঙ্কা নিয়ে আম্বিয়াদের দিন কাটছে। সরেজমিনে গলাচিপা পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াবদা বেড়িবাঁধের বাইরে আবাসন প্রকল্পের একটু ভিতরে গিয়েই এমন চিত্র দেখা গেছে।
আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘আমি বুড়া মানুষ। আগেও অনেক ঝড় দেখেছি। কিন্তু এইবার বইন্যায় পানি বেশি উঠবে বলে সবাই কওয়া কওই (বলাবলি) করছিল। আমার একটু একটু ডরও লাগজে। কিন্তু সোমবার দুপুরে জোয়ারের সময় অল্প সময়ের মধ্যে আমাগো ঘরের মধ্যে পানি ওডে (ওঠে)। দুপুরে খাইতেও পারি নাই। চিন্তা হরছি বিয়ালে সাইক্লোন শেল্টারে যামু। কিন্তু এতো বিষ্টি আর বাতাস আবার ঘরের মধ্যে হাঁটু সমান পানি। কোনো দিকে যাওয়ার জাগাই পাইলাম না। পরে সন্ধ্যার সময় যহন বেশি বাতাস আর বিষ্টি ওই সময় আমার নাতি জামাই আইয়া আমারে বড় একটা ঘরে লইয়া গ্যাছে। আবার বেইন্নাকালে আইয়া পড়ছি। এহন তো ঘরের মধ্যে যে অবস্থা সব পানিতে তলাইয়া ভিজ্জা গেছে। দুই দিন ভাত খাই নাই।’
বন্যা চলাকালীন সময়ে কোন স্বেচ্ছাসেবক বা উদ্ধারকারী দল তাদের কাছে আসছে কি না- এমন প্রশ্নর জবাবে আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘এমনে মাইকিং হুনছি। আর আমাগো আশ্রায়ণের সভাপতি আইয়া কইছিল শেল্টারে যাওয়ার জন্য। এ ছাড়া আর কেউরেই (কাউকেই) পাই নাই। কোনো সাহায্যের লাইগ্যাও কেউ আয় নাই।’
বিডি প্রতিদিন/হিমেল