আকর্ষণীয় রং ও মজাদার স্বাদ ছাড়াও স্বাস্থ্য উপকারিতা আর অবর্ণনীয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন লাভজনক বেদানা বা আনার চাষ করে লাখোপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের চাষী আহসান হাবিব রাসেল। অল্প খরচে বেশি আয় এবং এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়ায় বেদানা বা আনার চাষে সফলতা পাওয়ায় অনেকেই এই লাভজনক আনার চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ অঞ্চলে বেদানা বা আনার ব্যাপকহারে চাষ হলে দিনাজপুরের অর্থনৈতিকভাবে বিপ্লব সাধিত হবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা।
স্বাস্থ্যের উপকারী ফল বেদানা বা আনার ছোট বড় সকলের প্রিয়।
ফলটি ক্ষিদে বাড়ানো, শরীর স্নিগ্ধ করা, মেদ ও বল বৃদ্ধি করাসহ রুচি বৃদ্ধি, শ্বাসকষ্ট,কাশি ও বাত ব্যধি দূরসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য গুনাগুণ রয়েছে। রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম ও ভিটামিন‘সি’। প্রতিদিন বেদানার রস খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। জন্ডিস, বুক ধড়ফড়ানি, বুকের ব্যথা,কাশি,জ্বর সারাতে, কণ্ঠস্বর পরিষ্কারে ভুমিকা রাখে। রক্তের কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বেদানা অয়েল ময়শ্চারাইজার হিসেবে ভালো কাজ করে ও ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে প্রতিরোধ করে। বেদানায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা দাঁতে প্লাক জমতে বাধা দেয়।
বেদানার কলমের গাছে ৩-৪ বছর থেকে ফলন শুরু হয়। ফুল আসার পর থেকে ফল পাকা পর্যন্ত ৬ মাস সময় লাগে। পুষ্ট ফলের খোসার রঙ হলদে-বাদামী হলেই ফল পাড়ার উপযুক্ত হয়। গাছে ফল বেশী দিন রেখে দিলে ফল ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রথমে ফল কম ধরলেও ভালো পরিচর্যা নিলে গাছপ্রতি ২০০-২৫০টি ফল পাওয়া যেতে পারে। একটি গাছ ত্রিশ বছর পর্যন্ত লাভজনক ফলন দিয়ে থাকে। বাজারে বেদানা বা আনার প্রতি কেজী ৩০০টাকা দরে বিক্রি করে চিরিরবন্দরের দক্ষিন নশরতপুর গ্রামের রাসেলকে লাখোপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে এই ফলের বাগান।
কৃষক আহসান হাবিব জানান, দুই বছর আগে ভারত থেকে বানিজ্যিক সুপা ভাগোয়া নামে একটি জাতের চারা আনেন। পরে ওই চারা থেকে কলম করা হয় এবং আরও মৃদুলা, ফুলে আরাক্তা, থাই, অষ্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানী, গ্লোসা রসেভিয়া জাতের চারা সংগ্রহ করেন। বর্তমানে ১০শতক জায়গায় বেদানা বা আনার চাষ করছে।একটি গাছে সর্বোচ্চ ৬৫টি আনার হয়েছে। দিন দিন ফলন বাড়বে। পরিপক্ক বেদানা বা আনার খেতে খুবই রসালো ও মিষ্টি। বর্তমানে তার বাগানের ৫০টি গাছের প্রতিটিতেই ফল ধরেছে।
তিনি জানান, বেদানা বা আনার ফলের ভিতরের অংশ টসটসে লাল এবং ডালিম এর ভিতর গোলাপী হয় এই পার্থক্য। বেদানা বা আনার গাছে সারা বছরই কিছু না কিছু ফুল আসে। বসন্তকালে যে ফুল হয়, সেই ফুল থেকে গ্রীষ্মকালে ফল হয়। বর্ষার শুরুতে যে ফুল আসে এবং সেই ফুল থেকে যে ফল হয় তা কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে সংগ্রহের উপযুক্ত হয় এবং এ ফলের মান খুব ভালো হয়। তাই বর্ষার শুরুতে ফুল আনার জন্য পৌষ মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত গাছের বিশেষ পরিচর্যা নিতে হয়। বর্ষা শুরুর আগে দু’একটা সেচ দিলে ভালো। বর্ষা শুরুর সাথে গাছের বৃদ্ধি ও ফুল ফল ধারণ শুরু হয় এবং কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে এই ফল সংগ্রহে উপযুক্ত হয়। গাছে ফলের বৃদ্ধি শুরু হলে কাপড় বা পলিথিন দিয়ে বৃদ্ধিমান ফল ব্যাগিং করে দিলে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বাজারে এই ফলের দাম বেশী তাই এটি লিচুর চেয়ে কয়েকগুন বেশী লাভ করা যাবে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এএ