বগুড়ায় তীব্র শীতে বোরোর বীজতলা আক্রান্ত হয়েছে। পর্যাপ্ত সূর্যালোকের অভাবে বোরো ধানের বেড়ে ওঠা চারাগুলো হলুদ হয়ে গেছে। আক্রান্ত বীজতলা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে বগুড়া অঞ্চলের কৃষকরা। বোরো ধানের বীজতলা নষ্টের শঙ্কা করছেন কৃষকরা। এদিকে কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরেই বগুড়ায় ঘন কুয়াশা এবং উত্তর পূর্ব হিমেল হাওয়ায় তীব্র শীত জেঁকেঁ বসেছে। কুয়াশা ও শীতের কারণে উপজেলার বোরো ধানের বীজতলার প্রায় চার ভাগের একভাগ হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন কৃষকরা। বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, গাবতলী ও শেরপুর উপজেলায় নদী ও খাল বেশি থাকায় শীতও বেশি পড়েছে। তীব্র শীতের কারণে এই অঞ্চলের বোরোর বীজতলা নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। অপরদিকে বগুড়ার পশ্চিম অঞ্চলের উপজেলা আদমদিঘি, দুপচাঁচিয়া, কাহালু, নন্দীগ্রাম ও শিবগঞ্জ এলাকায় বীজতলা ভালো আছো। তবে কুয়াশা ও তীব্র শীত থাকায় কোথাও কোথাও বোরোর চারা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, বগুড়া অঞ্চলে বোরোর বীজতলা তৈরী করছে চাষিরা। জেলায় চলতি বছর ৯ হাজার ২১৮ হেক্টর বোরোর বীজতলা তৈরী করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে অর্জিত হয়েছে এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৮ হাজার ৮১০ হেক্টর। বীজতলা আরো তৈরী হবে। মাঠে এখন সরিষা ও আলু রয়েছে। সরিষা ও আলু উত্তোলনের পর বীজতলা আরো তৈরী হবে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের বড় কুতুবপুর গ্রামের বাবলু মুন্সী জানান, তিনি প্রতি বছর প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেন। এর জন্য তিনি ১৫০ কেজি ধানের বীজ ছিটিয়ে বীজতলা তৈরি করেছেন। গত কয়েকদিনের প্রচন্ড শীতে তার চার ভাগের একভাগ বীজতলার বোরো ধানের চারাগাছগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। তবে আগামভাবে তৈরি করা বোরো ধানের বীজতলার কোন ক্ষতি হয়নি। তিনি বলেন, চারাগাছগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করে প্রায় মরে যাওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেলে আসছে বোরো ধান আবাদ কিভাবে করবো তা নিয়ে খুবই চিন্তায় দিনাতিপাত করছি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছর উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৬০০ হেক্টর। এর বিপরীতে কৃষকরা ৭৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন। কিছু কিছু বীজতলার চারাগাছ হলুদ হয়ে গেছে। কত পরিমাণ বীজতলার চারাগাছ হলুদ হয়েছে তা এখনো নিরুপন করা হয়নি। তবে এমতাবস্থায় কৃষকদের বীজতলায় রাতে শ্যালোমেশিনের গরম পানি সেচ দিয়ে সকালে বের করে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বেশি সমস্যায় থিওভেট স্প্রে করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ সমস্যায় উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ মাঠে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানে ন্যস্ত রয়েছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল হালিম জানান, গত কয়েকদিন ধরে তীব্র শীতে সারিয়াকান্দিতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না থাকায় চারাগাছের পাতাগুলো ঠিকমতো খাদ্য তৈরি করতে পারছে না। ফলে চারাগাছের পাতাগুলো হলুদ হয়ে গেছে। সোমবার সকাল থেকেই পর্যাপ্ত সূর্যের আলো দেখা গেছে। আশা করা যাচ্ছে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে চারাগাছগুলো পুনরায় ঠিক হয়ে যাবে এবং এদের পাতাগুলো সবুজ বর্ণ ধারণ করবে। এতে ভয়ের কোন কারণ নেই। আশা করা যাচ্ছে এর প্রভাবে বোরোধান চাষের কোনরূপ সমস্যার সৃষ্টি হবে না।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মতলুবর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত শীতজনিত কারণে ১ হেক্টর জমির বোরো বীজতলা আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া জেলার সকল বীজতলা ভালো রয়েছে। এখন রোদ দেখা যাচ্ছে, যে টুকু আক্রান্ত হয়েছে সেটুকুও সুস্থ হয়ে যাবে। বগুড়ায় রোদ উঠায় বোরোর বীজতলা আর আক্রান্ত হবে না। তাছাড়া কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম