রংপুর চিড়িয়াখানায় চট্টগ্রাম থেকে রংপুরে এসেছিল সিংহী বর্ষা রাণী। ঘর বাঁধার স্বপ্ন ছিল সিংহ সাবক রাজার ভাই বাদশার সাথে। রাজাও ঘর বাধার স্বপ্নে চট্টগ্রামে যান বর্ষা রাণীর বোন ঝর্ণার সাথে ঘর বাঁধতে। কিন্তু ঘর বাধলেও গত ৭ বছরে তাদের মধ্যে বনিবনা হয়নি। একত্রে থাকলেও বংশবিস্তার করতে পারেনি দুই জুটির কেউই। এটি হচ্ছে রংপুর চিড়িয়াখানার সিংহ শাবকের গল্প। ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে আনা হয় প্রায় ১১ বছর বয়সী মেয়ে সিংহ বর্ষা রানীকে।
রংপুর চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, রংপুর চিড়িয়াখানায় প্রায় ১২/১৩ বছর বয়সি রাজা ও বাদশা নামে দুই সিংহ শাবক ছিল। তাদের কোন মেয়ে সঙ্গী ছিল না। অপরদিকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাতেও বর্ষা ও ঝর্ণা রাণী নামে প্রায় দুই বছর বয়সী মেয়ে সিংহ ছিল। তাদেরও কোন পুরুষ সঙ্গী ছিলনা। বিষয়টি প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানানো হলে তারা সিদ্ধান্ত নেয় দুই চিড়িয়াখানার ছেলে মেয়ে সিংহ বিনিময় করার। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্ট্রগাম থেকে মেয়ে সিংহ বর্ষা রানীকে রংপুরে আনা হয়। তখন থেকে বর্ষা রানী বাদশার সাথে একই খাচায় থাকছেন।
অপরদিকে রংপুর থেকে রাজা নামের সিংহ শাবকটি চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়। দুই ভাই ও দুবোন তখন থেকে পৃথক ভাবে সংসার পাতেন। বিষয়টি সে সময় বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয়। রংপুর ও চট্টগ্রাম চিড়িয়াখায় এ উপলক্ষে ঢাকঢোল পিটিয়ে অনুষ্ঠানও করা হয়। সেসময় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ আশা করেছিল এই দুই জুটির সিংহ খুব দ্রুতই তাদের আগামী বংশধর জন্ম দিবেন। কিন্তু তা বাস্তবে হয়নি। এই দুই জুটির মিলন মধুর হয়নি। ৭ বছরের তাদের মনের মিল হয়নি। ফলে ঘর বাধলে তাদের সংসারে নতুন কোন অতিথি আসেনি। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ অনেক আশা করে এই দুই জুটিকে একত্র করেছিলেন সিংহের বংশবৃদ্ধির জন্য। কিন্তু চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সেই আশা পূরণ হয়নি। রংপুর এবং চট্টগ্রামের কোন জুটিই এখন পর্যন্ত বংশ বিস্তার করতে পারেনি। এখন বয়সের ভারে দুই জোড়া সিংহের অবস্থা কুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। পুরুষ সিংহটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
এদিকে চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, রংপুর চিড়িয়াখানায় ৩২ প্রজাতির প্রায় ২৫৩ প্রাণি রয়েছে। চিড়িয়াখানায় যে সব প্রণি রয়েছে সেগুলো হল, সিংহ দুটি, জলহস্তি ৩ টি, ময়ুর ৮টি,হরিণ ৫৯ টি,অজগর সাপ দুটি,ইমু ৩টি,উটপাখি ১টি, বানর ৯টি, কেশওয়ারি ১টি, গাধা ৩টি, ঘোড়া ২টি,ভাল্লুক ১টি উল্লেখযোগ্য। দেশে দুটি সরকারি চিড়িয়াখানের মধ্যে রংপুর একটি। এ সসব প্রাণিগুলোর মধ্যে নিঃসঙ্গ অবস্থায় রয়েছে উটপাখি, ভাল্লুক,হনুমন, কেশওয়ারি। দীর্ঘদিন থেকে কর্তৃপক্ষ এই প্রাণিগুলোর সঙ্গি আনার জন্য ঢাকায় আবেদন করলেও তা গ্রাহ্য হয়নি।
রংপুর চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. আম্বার আলী জানান, মূলত সিংহের বংশ বিস্তারের জন্য ওই দুই জোড়া সিংহ শাবকের জুটি বাধা হয়েছিল। কিন্তু কোন জুটিই সন্তান জন্ম দিতে পারেনি। তিনি বলেন, পুরুষ সিংহ শাবকের বয়স একটু বেশি হওয়ায় মেয়ে সিংহ শাবকের সাথে এডজাস্ট হয়নি। তাই বংশ বিস্তার হচ্ছে না।
বিডি প্রতিদিন/এএম