এবার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে মোছা: সীমা খাতুন (৩৮) নামে রোগীর এক স্বজন আহত হয়েছেন। তার মাথায় ৬ টি সেলাই দিতে হয়েছে। রোগীর সেবা করতে এসে সীমা খাতুন এখন নিজেই রোগী হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের দোতলার ৩ নং ভিআইপি কেবিনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জন্য রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আহত সীমা খাতুনের ছেলে প্রান্ত আলী জানান, তারা কুষ্টিয়া শহরতলীর চৌড়হাস আদর্শপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। গত ৬ এপ্রিল দিবাগত রাত্র দেড়টার দিকে তার পিতা রিপন আলীকে (৪৫) হার্টের সমস্যাজনিত কারণে প্রতিদিন তিন হাজার টাকা ভাড়ায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের দোতলার ৩ নং ভিআইপি কেবিনে ভর্তি করা হয়। ওই কেবিনে ভর্তি থেকেই তার পিতার চিকিৎসা চলছিল। পরিচর্যাকারী হিসেবে তার মা মোছা: সীমা খাতুন প্রায় সার্বক্ষণিক রোগীর পাশে অবস্থান করছিলেন। এ অবস্থায় রবিবার (৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে হঠাৎ হাসপাতালের কেবিনের ছাদের পলেস্তরার কিছু অংশ খসে তার মায়ের মাথার ওপর পড়ে। এতে তার মা রক্তাক্ত জখম হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে মাথার ক্ষতস্থানে ৬ টি সেলাই দেয়ার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে তার মা এবং বাবা হাসপাতালের স্টাফ কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগে প্রান্ত দাবি করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এবং এই দুর্ঘটনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই দায়ী। তিনি এ ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরেই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের দোতলার ভবনগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। লেবার ওয়ার্ডসহ দোতলার অধিকাংশ ওয়ার্ডের ছাদের পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে। হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে এর আগেও একাধিকবার রোগী, রোগীর স্বজন, নার্স এমনকি চিকিৎসক আহত হয়েছেন।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হোসেন ইমাম দুর্ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, এর আগেও ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড এবং কেবিন উল্লেখ করে গণপূর্ত বিভাগকে মেরামতের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। তারা সে সময় কিছু রিপিআরিং কাজও করে। এ দুর্ঘটনার পরে তাৎক্ষণিকভাবে আজকে (রবিবার) আবারও লিখিতভাবে গণপূর্ত বিভাগকে জরুরি মেরামতের জন্য চিঠি প্রদান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহাদৎ হোসেন জানান, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬২ সালে কুষ্টিয়া জেনারের হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০০ সালে ১৫০ শয্যায় উন্নীত হয় এবং ২০০৭ সালে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল