বগুড়ায় ঈদের ছুটিতে পৃথক ঘটনায় তিনজন খুন হয়েছে। বগুড়া জেলা পোস্ট অফিস থেকে অফিস সহায়ক এর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের মনিনাগ গ্রামে প্রতিপক্ষের মারপিটে রবিউল ইসলাম (২১) ও জেলা সদরে অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক রেজাউল করিম পান্না সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন।
জানা যায়, সোমবার ২৪ এপ্রিল বগুড়া জেলা পোস্ট অফিস থেকে অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্যের (৪৮) মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। সোমবার সকাল ৯টায় মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। নিহত প্রশান্ত বগুড়া শাহজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া উত্তরপাড়া মৃত প্রাণকৃষ্ণ আচার্যের ছেলে। বিষয়টি ডাকাতি নাকি অন্য কোন ঘটনা সে বিষয়ে জোর তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ সদস্যরা।
জানা যায়, নিহত প্রশান্ত কুমার বগুড়া প্রধান ডাকঘরের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে ঈদের ছুটিতে রাতে গার্ডের দায়িত্ব পালন করছিলেন। কখন কিভাবে খুন হয়েছে প্রশান্ত সে বিষয়ে তদন্তে নেমেছে বগুড়া পুলিশ বিভাগ।পুলিশ সদস্যরা বলছেন, লাশ উদ্ধারের সময় প্রাথমিকভাবে তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই গোবিন্দকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনাকে ডাকাতি চেষ্টা বলে মনে হচ্ছে। ঘটনাস্থলে গোয়েন্দা পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডির সদস্যরা কাজ করছে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনার তদন্তে কাজ করছে। সিসিটিভি ফুটেজে মুখোশ পরা এক ব্যক্তিকে দেখা গেছে। ভোল্টে থাকা টাকা পয়সা খোয়া গেছে কিনা সে বিষয়ে দেখা হচ্ছে। তবে মূল ভোল্ট ভাঙতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।
ঈদের দিন ২২ এপ্রিল শনিবার সকালে নামাজ শেষ করে বাড়ি ফেরে নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের মনিনাগ গ্রামের মো. হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলাম। বাড়ি ফিরে বাবার সাথে পারিবারিক কবর স্থানে তার দাদীর কবর জিয়ারত করতে যায়। কবরস্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলানোকে কেন্দ্র করে সেখানে তার চাচাতো ভাই শফিকুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলামের সাথে কথাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে তার চাচাতো দুই ভাই লাঠি দিয়ে রবিউল ইসলামকে মারপিট করে। মাথায় আঘাত পেয়ে রবিউল গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭ টায় রবিউল মারা যান।
অপরদিকে, ২১ এপ্রিল রাত পৌনে ১২টায় বগুড়ায় জমিজমা নিয়ে পূর্বশত্রুতার জেরে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রেজাউল করিম পান্নাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। বগুড়া সদর থানার সামনে ছুরিকাঘাতের সময় পুলিশ সদস্যরা উদ্ধারে এগিয়ে গেলে এলোপাথারি ছুরিকাঘাতে তিন পুলিশ সদস্য ছুরিকাঘাতে আহত হয়। ছুরিকাঘাতে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনগণের সহযোগিতায় পুলিশ সদস্যরা মুল অভিযুক্ত মো. মেন্দি খাইরুলকে (৪০) আটক করে। আটক খায়রুল জেলা শহরের ফুলবাড়ি এলাকার সম্রাট পিত্তিরাজের ছেলে।
বগুড়া জেলা পুলিশের সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম জানান, সদর থানা মোড়ে মেন্দি নামের ওই যুবক নিহত শিক্ষক পান্নাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকেন। এই সময় তাকে উদ্ধার করতে গেলে দুই পুলিশ সদস্য ও এক পথচারী আহত হন। পরে আহতদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষকের মৃত্যু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে মেন্দিকে আটক করা হয়েছে। আটক মেন্দি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তিনি ওই শিক্ষকে হত্যা করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল