নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চলে ককটেল মারতে বাধা দেয়ায় বাড়িতে ঢুকে এক পোল্ট্রি ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ৪০ ঘণ্টা পার হলেও এখন পযর্ন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নিহতের মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে রায়পুরা থানার হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
ঈদের দিন শনিবার সন্ধ্যায় রায়পুরার নিলক্ষ্যার বীরগাঁও গ্রামে নিজ বাড়িতে ঢুকে পোল্টি ব্যবসায়ী জুলহাস মিয়াকে (২৮) হত্যা করা হয়। ওই সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন সাদ্দাম, ইয়ামিন, হাবিব ও আমিনুল। তাদের মধ্যে দুই জন ঢাকায় ও দুই জনকে নরসিংদীর একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ৪০ ঘণ্টা পার হলেও এখন পযর্ন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। এর আগে নরসিংদীর শিবপুরে বাড়ির ভেতরে ড্রইং রুমে ঢুকে শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও শিবপুর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুন অর রশিদ খানকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় সন্ত্রাসীরা। পর পর ৩টি গুলি করলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। জেলা জুড়ে প্রকাশ্যে এসব হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে নিলক্ষ্যা বীরগাঁও গ্রামে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। চাপা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে এলাকাজুড়ে। অপ্রীতিকর পরিস্থতি এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের দুইদিন পর নিহত জুলহাসের বাড়িতে খোঁজ খবর নিতে গিয়েছিলেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ নইম খান, নরসিংদী পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম (পিপিএম), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অনির্বাণ চৌধুরী, (রায়পুরা সার্কেল) সত্যজিৎ কুমার ঘোষ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর হোসেন, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মাকর্তারা।
পুলিশ ও নিহত স্বজনরা জানিয়েছে, ইদুল ফিতরের দিন শনিবার সন্ধ্যায় রায়পুরার নিলক্ষ্যার হরিপুর গ্রামের জজমিয়ার ছেলে জিয়া, আরিফ,সোলায়মান, মামুনসহ বেশ কয়েকজন যুবক বীরগাঁও গ্রামের সামসু মিয়ার ছেলে জুলহাসের মুরগির ফার্ম এর সামনে ককটেল ফাটাতে থাকে । ওই সময় নিহত জুলহাস তাদেরকে ককটেল ফোটাতে বারণ করেন। এতে তারা জুলহাসের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে দলবল নিয়ে অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জুলহাসের বাড়িতে ঢুকে জুলহাসকে গুলি করেন। এ সময় তার স্বজনরা বাধা দিতে আসলে তাদেরকেও গুলি করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জুলহাসকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ চার জনকে চিকিৎসা ঢাকায় ও নরসিংদীর একটি হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
নিহতের ভাই মানিক মিয়া বলেন, হরিপুর গ্রামের জজমিয়ার ছেলে জিয়া, আরিফ, সোলমান, মামুনৎসহ বেশ কয়েকজন যুবক ককটেল ফোটাচ্ছে। তাদের বাধা দেয়ায় তারা নির্মমভাবে প্রকাশ্যে জুলহাসকে গুলি করে হত্যা করে। তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে এসে বাড়িতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়। এত বড় ঘটনার পরও তারা এখনো গ্রেফতার হয়নি।
নিহতের মামা আজান মিয়া বলেন, আমরা কখনো ঝগড়া পছন্দ করি না। আমাদের লোকজনকে যারা গুলি করে হত্যা ও আহত করেছে তাদেরকের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এসময় নিহতের স্বজনদের কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন নিহতের দাফন শেষ করেছি, এখন মামলা প্রস্তুতি চলছে।
রায়পুরা থানার ডিউটি অফিসার এস আই আরিফ রাব্বানি বলেন, নিহতের মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞতনামা আরো ২০-৩০ জনকে আসামি করে রায়পুরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামি ও এ ঘটনায় কেউ গ্রেফতার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তদন্তের স্বার্থে কিছু জানায়নি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল