ঝড় হোক আর জলোচ্ছ্বাস। নদীর পানিতেই তাদের আশ্রয় নিতে হয়। জন্ম-মৃত্যু, জীবন-জীবিকা সবই তাদের নদীতে। তারা মানতা সম্প্রদায়। ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানতে পারে-এমন সংবাদ পেয়ে নদী থেকে উঠে এসে আশ্রয় নিয়েছে খালের মোহনায়।
শনিবার সকালে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ভাংতির খালের মোহনায় গিয়ে দেখা মিলে তাদের। কথা হয় বহরের প্রধান মোতালেব সরদারের সঙ্গে।
সরদার জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা আসছে এমন খবর পেয়ে মেঘনা নদী ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে নৌকাবাসী মানতা গোষ্ঠীর লোকজন। তিনি তার বহর নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এই ভাংতির খালে। ভোলা জেলায় তাদের চারটি বহরে ৭ থেকে ৮ শত নৌকায় প্রায় ৬ হাজার মানতা রয়েছে। তার বহরে দুই শতাধিক নৌকায় ছেলে বুড়ো মিলিয়ে ১২ শত সদস্য।
বহরের প্রবীণ সদস্যা ভানু বেগম জানান, তাদের মানতা সম্প্রদায়ের ঘর সংসার সবই নদী আর নৌকায়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ছোট ছোট এসব নৌকায়ই তাদের বসবাস। প্রতিটি নৌকায় গড়ে ৫ থেকে ৭ জন সদস্য। মেঘনায় মাছ ধরে চলে তাদের জীবন-জীবিকা। নদীর পানির সঙ্গে তাদের মিতালি থাকলেও স্থলে সহায়-সম্পত্তি কিছুই নেই। ফলে ঝড় বাদলে সর্বস্ব হারানোর ভয়ও বেশি তাদের। একসময় ঝড় আসার আগাম খবর পাওয়া যেত না। তখন অনেক নৌকা ডুবে যেত। মানুষ মারা যেত। এখন দিন বদলেছে। আগাম খবর পাওয়া যায়। ঘূর্ণিঝড় আসছে শুনে তারা নদী ছেড়ে পাশের খালে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে শুক্রবার বিকেলে।
আরেক সদস্যা আলেয়া বেগম জানান, যত বড় ঝড় জলোচ্ছ্বাস আসুক নৌকা ছেড়ে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যান না। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে কিছু কিছু নারী ও শিশু সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়। পুরুষরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় থেকে যায়।
বহরের সদস্য আবুল কালাম জানান, নৌকা ছেড়ে চলে গেলে নৌকার কোনো ক্ষতি হলে কে দেখবে? নৌকা ডুবে গেলে কে দেখবে? তাই নৌকা ছেড়ে কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চায় না।
মানতা সম্প্রদায়ের সদস্যরা জানান, ঝড় জলোচ্ছ্বাসের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে সকল সুযোগ-সুবিধা আসে, তার কিছুই পায় না তারা। তারা প্রতিদিন মাছ ধরে যা আয় করে, তা দিয়েই সংসার চলে। কিন্তু ঝড়ের কারণে তিন চারদিন নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে অনেক পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটায়। তাদের দেখার কেউ নেই।
বহরের প্রধান মোতালেব সরদার জানান, তারা জেলে হওয়ায় সত্ত্বেও তাদের জেলে কার্ড দেওয়া হচ্ছে না। তাই সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন এই সম্প্রদায়ের লোকজন।
রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল হক মিঠু চৌধুরী জানান, তার রাজাপুর ইউনিয়নের ভাংতির খালে একটি বহর থাকে। তাদের কয়েকজন জেলে কার্ডের চাল পায়। বাকিদেরকেও জেলে কার্ড দেওয়া হবে। ঝড়ের সময় তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বললেও তারা নৌকা ছেড়ে যেতে চায় না। তবে দুর্যোগকালীন সকলকেই সরকারি সহায়তা দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
সদর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, মানতা সম্প্রদায়ের লোকজন বহরে একত্রে থাকলেও বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা ভোটার আইডি কার্ড নিয়েছেন। আবার অনেকের আইডি কার্ড নেই। তবে সদর উপজেলায় ২০/৩০ জন জেলে কার্ড পেয়েছেন। বাকিদেরকেও দেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই