২৯ আগস্ট, ২০২৩ ১৯:২০

বগুড়ায় বন্যায় নদী ভাঙন, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক,বগুড়া

বগুড়ায় বন্যায় নদী ভাঙন, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন মানুষ

বগুড়ার সারিয়াকান্দি ,সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় বয়ে যাওয়া যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে যমুনা নদীর বগুড়া অংশে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঅঞ্চল তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে নদীতে ভাঙন দেখা দেয়ায় নদী পাড়ের মানুষজন অন্যত্র মালামালা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। গত দুই দিনে প্রায় তিন শতাধিক গাছ ও বেশ কিছু ঘরবাড়ি নদী বক্ষে তলিয়ে গেছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সোমবার (২৮ আগস্ট) বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। পানির উচ্চতা ছিল ১৬.১১ মিটার। আর মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বগুড়া সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৬.১৬ সেন্টিমারে। আর বিপৎসীমা হলো ১৬.২৫ মিটার। বলা হচ্ছে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে লোকালয়ে বড় ধরণের বন্যার সৃষ্টি হবে। যমুনা নদীর পাশাপশি গত ২৪ ঘণ্টায় বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ছে ৪৩ সে.মি। মঙ্গলবার দুপুরে বঙালি নদীর পানি ১৩.৮৮ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর বিপৎসীমা নির্ধারণ করা আছে ১৫.৪০ সেন্টিমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক নদীর পানি বৃদ্ধির গতি বিধি পরিদর্শন করছে। তবে সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে নতুন করে নদী ভাঙতে শুরু করেছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালাপুর ইউনিয়নের যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেয়া এলাকাবাসী তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। ভাঙন দেখা দেয়ায় বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা অব্যাহত রেখেছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা এবং কামালপুর গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। কয়েক দিনের পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের ধলিরকান্দি, নীজ কর্ণিবাড়ী, বয়রাকান্দি, বড় কুতুবপুর এবং পার দেবডাঙ্গা গ্রামের বাড়িঘরে পানি উঠেছে এবং এসব এলাকার লোকজন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের সুজালীর পাড়া, চর দলিকা, হাটবাড়ী, সুজনের পাড়া, শিমুলতাইড় এবং মানিকদাইড় চরের বেশ কিছু পরিবারের বাড়িঘরে পানি উঠেছে এবং হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। কাজলা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া, কাজলা, বাওইটোনা, উত্তর টেংরাকুড়া, দক্ষিণ টেংরাকুড়া, এবং জামথল চরের নিম্ন অঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। শেরপুর ইউনিয়নের দিঘাপাড়া চরের প্রায় ১৮০ পরিবারের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। বোহাইল ইউনিয়নের উত্তর শংকরপুর, দক্ষিণ শংকরপুর এবং ধারাবর্ষা চরসহ বেশকিছু চরের বেশকিছু বাড়িঘরে পানি ওঠার খবর পাওয়া গেছে। কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের নান্দিনার চর, ইন্দুরমারা, ডাকাতমারা, শোনপচা চরে পানি উঠেছে এবং অনেক পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা তাদের ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং তাদের গৃহপালিত গবাদিপশু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ, আশ্রয়কেন্দ্র অথবা উঁচু কোথাও আশ্রয় নিয়েছেন।

সারিয়াকান্দি কৃষি অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনো ফসল সেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। তবে কিছু সবজির ক্ষেতে পানি প্রবেশ করেছে। তবে সেটা খুবই কম।

কামালপুর গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে নদী ভাঙনের শিকার আশরাফুল আলম জানান, কমপক্ষে ৬০টির মত ঘর ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কিছু ঘর নদীতে চলে গেছে। গ্রামবাসী সকলে মিলে ঘর ভেঙে নতুন করে নিরাপদে যেতে হচ্ছে। গত প্রায় ২৫ বছর আগে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলো আশরাফুলের পরিবার। কিন্তু চলতি বছর বন্যার শুরুতেই ভাঙনের কবলে পড়ায় জমিজমা ফেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদে ছুটছেন। ঘরের টিন, আসবাবপত্র তুলে নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হচ্ছে।
 
একই গ্রামের জহুরুল, মানিক, মুকুল, মোজাম, মোসলেম, পল্টু, শাহনাজ বেগম, চাঁন মিয়া আকন্দরাও তাদের ঘরবাড়ি সরে নেওয়ার কাজ করছে। সকলের চোখ ভেজা থাকলেও নদী ভাঙনের কবলে পড়ে চলে যাচ্ছে দূরের নিরাপদ আশ্রয়ে।
 
বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, কামালপুর ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের পাশে যেখানে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেই বেড়িবাঁধটি পূর্বে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এর এক কিলোমিটার দূরে আরও একটি নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। 

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর