গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে আনন্দমুখর পরিবেশে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামের কুমার নদে এ নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। ওই ইউনিয়নের হোগলাকান্দি-চকবোনদোলা দুই গ্রামবাসীর উদ্যোগে মহেশপুর সেতু থেকে চকবোনদোল সেতু পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
গোপালগঞ্জ, নড়াইল, ফরিদপুরের নগরকান্দা, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গার অন্তত ২৫টি নৌকা এই বাইচে অংশ নেয়।
বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ বাইচ। ঢোল, কাশির বাদ্যের তালে নেচে হেইও হেইও রবে বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহ সৃষ্টি হয়।আবহমান গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে হাজার প্রাণের আনন্দে মেতেছিল ওইসব এলাকার নারী-পুরুষ আবালবৃদ্ধবনিতা।
নৌকায় ও ট্রলারে করে নৌকা বাইচ দেখতে নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজে সন্ধ্যায় এ নৌকা বাইচ শেষ হয়। বিভিন্ন বয়সের মানুষ নদের দু'পাড়ে দাঁড়িয়ে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন।
নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে হোগলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে লোকজ মেলা বসে। মেলায় শতাধিক দোকানে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে। কিছু দোকানে বাঁশ-বেত, মৃৎ শিল্প, তৈজসপত্র খেলানার দোকান নিয়ে বসে।
দু'পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষের হৃদয়ে জাগে দোলা। এসময় দুই পাড় থেকে দর্শনার্থীরা হাত নেড়ে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহিত করতে দেখা যায়।
প্রতিযোগিতায় যৌথভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেন স্থানীয় হোগলাকান্দি গ্রামের ওসমান শেখ ও বরকত মোল্লার নৌকা। চকবোনদোলা গ্রামের উকিল মিনার নৌকা দ্বিতীয় ও রাব্বির নৌকা তৃতীয় স্থান অধিকার করে।
পরে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহজাহান মিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহেশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহামন লুথু মিয়া।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম কামাল হোসেন বলেন, ৭৫-এর পরে বিএনপি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছিলো। বর্তমানে বাংলাদেশে মাদক, জঙ্গিবাদসহ যুব সমাজের যে অধঃপতন তা এই কারণেই হয়েছে।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশের সংস্কৃতিকে আবার পুনর্জীবিত করেছেন। এখন দেশের প্রতিটি জেলার গ্রামগঞ্জে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে আগামীতেও এমন খেলা বা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
নৌকা বাইচ আয়োজক কমিটির প্রধান গিয়াস উদ্দিন গালিব বলেন, প্রতিবছর আমরা নৌকা বাইচের আয়োজন করে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় এবছরও আয়োজন করেছি। খুব আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো আজকের এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। আগামীতেও এ বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা রাকিব নামে এক যুবক বলেন, নৌকা বাইচ দেখতে পাশের গ্রাম থেকে এসেছি। খুবই ভালো লেগেছে। আগামীতেও এমন বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।
আয়োজক কমিটির আরেক সদস্য ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক সালাহউদ্দিন রাজ্জাক বলেন, দেশের যুবসমাজকে মাদক ও জঙ্গিবাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে এ ধরণের সংস্কৃতির আয়োজন করতে হবে। তাহলেই যুবসমাজকে মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে ফেরানো সম্ভব। আগামীতে এমন বাইচের আয়োজন করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল