কয়েক বছর আগেও বর্ষার পরে মাদারীপুরের বিস্তীর্ণ কৃষি জমি পরে থাকতো ফসলহীন। ফাঁকা মাঠে জন্মে তো আগাছা। চলতি মৌসুমে সেসব জমিতে আবাদ করা হয়েছে রোপা আমন। রোপা আমনে স্বপ্ন দেখছে কৃষক। দিগন্ত জুড়ে সবুজের সমারোহ সৃষ্টি করেছে এক অপরূপ দৃশ্য। প্রকৃতি যেন রোপা আমন মাঠে সবুজ রং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়েছে। এতে প্রকৃতির রূপ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। রোপা আমনের সবুজ পাতাগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। গ্রাম বাংলার এই দৃশ্য কৃষককে আরো মনোমুগ্ধ করেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মাদারীপুর জেলার রাজৈর, শিবচর,কালকিনি, ডাসার ও মাদারীপুর সদর উপজেলার ফসলের মাঠে কোথাও ফাঁকা নেই। যতদূর দৃষ্টি পড়ে সবুজ আর সবুজ। সেই সঙ্গে দূরে নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলায় সবুজের গাঢ় রঙে একাকার হয়ে নুতন সাজে সেজেছে বাংলার প্রকৃতি। সবুজে ঘেরা রোপা আমনের মাঠ পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকরা। শান্তির নিঃশ্বাস ফেলছে কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ফলনও ভালো হবে বলেও আশা করছে কৃষি বিভাগ। ফসল ভালো রাখতে ও ধানের উৎপাদন বাড়াতে ক্ষেত থেকে আগাছা পরিষ্কার, পোকা ও ইঁদুর দমন ও সার ছিটানোর কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। কৃষকরা পরম যত্নে পরিচর্যা করছেন ফসল ।
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুয়ায়ী লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে শতকরা সাড়ে ৮ ভাগ জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে রোপা আমন। কৃষি বিভাগের তথ্য মোতাবেক, চলতি খরিফ মৌসুমে হাইব্রিড জাতের রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ হেক্টর; আবাদ হয়েছে ৩৫২ হেক্টর। উফশী জাতের রোপা আমেন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার হেক্টর; আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৮শ ৪৩ হেক্টর। স্থানীয় জাতের রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ১শ হেক্টর; আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৭শ ৬৫ হেক্টর। মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ১শ ৬ হেক্টর; আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৯শ ৬ হেক্টর।
কৃষকরা বলছে রোপা আমন আবাদে তুলনামূলক খরচ কম। সেচ, সার, কিটনাশক তুলনামূলক কম লাগে। এতে করে সম্প্রতি সময় কৃষকরা ঝুঁকে পড়ছে রোপা আমানের প্রতি।
মাদারীপুর সদরউপজেলার পাঁচখোলা গ্রামের কৃষক দুলাল হাওলাদার বলেন, এক সময় এই মৌসুমে জমি পরে থাকতো অনাবাদী। দিন দিন কৃষকরা আকৃষ্ট হচ্ছে রোপা আমনের প্রতি। চলতি মৌসুমে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় আমন আবাদের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। তাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে কৃষকরা। ধানের চারাগুলো থেকে বের হচ্ছে থোর। এরপরই কৃষকদের আমন ক্ষেত থেকে বের হবে ধানের মৌ মৌ গন্ধ।
কৃষক রাজ্জাক তায়ানী বলেন, ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড় তেমন না থাকায় কয়েকদিনেই ফসলের মাঠ অনেক সুন্দর হয়েছে। পুরো মাঠজুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ দেখা যায়। ফসলের এই রূপ দেখে মনে আত্মতৃপ্তি মিলে। বাদশা মিয়া বলেন, মাঠজুড়ে ধানের সবুজ রং দেখলে মন ভরে যায়, বুকে তৃপ্তি আসে। আশা করছি এ বছর রোপা আমন ধানের ফলন ভালো হবে।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, কৃষকদের পাশে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়ার কারনে রোপা আমনের আবাদ বেড়েছে। সবসময় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি অফিস। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুন্দরভাবেই বেড়ে উঠছে আমন ধান। এতে এ বছর আশানুরূপ ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ