২৫ অক্টোবর, ২০২৩ ১৬:৫৫
টাকায় অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মা ইলিশ শিকার

পাবনা প্রতিনিধি:

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মা ইলিশ শিকার

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা ও বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা উপপেক্ষা করে পাবনার পদ্মা ও যমুনা নদীতে দেদারছে চলছে ইলিশ শিকার। জেলেদের দাবি সরকারি সহযোগিতা না পেয়েই বেঁচে থাকার তাগিদে ইলিশ শিকার করছেন তারা। মৎস্য অফিস বলছে বেশি বরাদ্দ না থাকায় সব জেলেকে সরকারি প্রণোদনা দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য কর্মকর্তা, নৌ পুলিশের যৌথ উদ্যোগে চলছে অভিযান। অভিযানের মধ্যেও টাকায় মিলছে ইলিশ ধরার অনুমতি।

গত ১২ অক্টেবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ বাজারজাতকরণ ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করেছে সরকার।
বেড়া উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দশটি ইউনিয়নের বেড়া পৌরসভা, হাটুরিয়া-নাকালিয়া, মাছখালি, ঘিওর, রাকশা, নগড়বাড়ি এলাকা তালিভ‚ক্ত মৎস্যজীবির সংখ্যা প্রায়  তিন হাজার পরিবার রয়েছে যারা ইলিশ আহরণ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে উপজেলার কয়েকটি মৎস্যজীবী সমিতির তথ্য হিসাব অনুযায়ী জেলে পরিবারের সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও বেশি। 
তাদের বিকল্প কোন আয়ের উৎস নেই। ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুমে ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে এ সময় মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। চলতি বছর বেড়া উপজেলার যমুনা নদী পাড়ের তিন হাজার জেলেদের মধ্যে সাড়ে সাতশ জেলে পরিবারকে প্রনোদনা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার গত কয়েক দিনে ৩০ জন জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রায় এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং জেলেদের বিরুদ্ধে ৯টি নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।  

অনুসন্ধানে কাজিরহাট কাজিশরিফপুর গিয়ে দেখা যায়, বেইলি ব্রীজের দুই পাশে দাঁড়িয়ে কিছু লোকজন পথযাত্রীদের ডেকে বলছেন, ভাই মাছ লাগবে না কি? অনেকেই তাদের সাথে গিয়ে জেলেদের বাড়ি থেকে দামদর করে মাছ কিনে আনছে। অথচ ৫০০ মিটার দূরে রয়েছে কাজিরহাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ি। জেলে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নৌকাপ্রতি প্রতিরাতের জন্য এক হাজার করে উৎকোচ দিয়ে নদীতে মাছ ধরার অনুমতি দিচ্ছেন।
এছাড়াও একটি দালাল চক্রের সাথে সমন্নয় না করলে জেলেদের নদীতে মাছ ধরার অনুমতি মিলে না। আবার যে সকল জেলেরা নৌ-পুলিশের অগোচরে নদীতে মাছ ধরেেত গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ছেন তাদের আবার ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানা যায়।
ইলিশ ক্রেতা হিসেবে কাজিশরিফপুর গ্রামে গেলে দেখা যায়, পুরো গ্রামটিই যেন ইলিশ বিক্রির হাট। গ্রামটি যমুনা নদীর কিনারে হওয়ায় জেলেরা নদী থেকে মাছ শিকার করে সরাসরি এই গ্রামেই প্রবেশ করে। গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকে  সকালে ও বিকেলে বিক্রি হয় মনকে মন ইলিশ মাছ। 
কাজিরহাট কাজিশরিফপুর নটাখোলা ঘাটে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশটি ইলিশ ধরা নৌকা জালসহ ঘাটে ভেড়ানো রয়েছে। এ যেন উৎসবমুখর পরিবেশে শিকার হচ্ছে মা ইলিশ। ৭শত থেকে ৯শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯শত টাকা ও ছোট সাইজের ইলিশ সাড়ে চারশ থেকে পাঁচশ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক থেকে দের কেজি ওজনের ইরিশ বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে ১৪ শ টাকা দরে। 
নগরবাড়ি রঘুনাথপুর মৎস্যজীবী সমিতির মো: আব্দুল মালেক জানান, আমার ইউনিয়নের সমিতির তালিকাভুক্ত জেলে আছে চারশতের মত। এর মধ্যে সরকারি অনুদান হিসেবে প্রায় একশজনের মত ২৫ কেজি করে চাউল পেয়েছে। এই চাউলে কয়দিন খাবে একটি পরিবার? শুধু অভিযান পরিচালনা করেই ইলিশ ধরা বন্ধ করা যাবে না। বরং ইলিশ ধরা নিষিদ্ধকালে উপজেলার সকল জেলেদেরকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হলে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা অনেক কমানো যাবে। মৌসুম শুরুর আগেই বেশিরভাগ জেলে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জাল কেনে। কিন্তু এই সময়ে আয় না থাকলেও তাদের কিস্তির টাকা শোধ করতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই নদীতে নামে।

টাকার বিনিময়ে ইলিশ ধরার অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে কাজিরহাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মাহিদুল ইসলান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার নৌ-পুলিশের কোন কর্মকর্তা অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত নয়। মা ইলিশ রক্ষার্থে দিনরাত আমরা অক্লান্ত প্ররিশ্রম করে যাচ্ছি। 

বেড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তার প্রতিদিনই আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার এই কয়দিনে ৩৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল যাহার বাজার মূল্য সাড়ে চার লক্ষ টাকা। সেগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। নগরবাড়ি ও কাজিরহাট নৌ পুলিশের সহযোগিতায় নয়জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে। আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা এসব জেলের জন্য সরকারি সহায়তা চেয়ে বার বার কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখে চলেছি। 
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোরশেদুল ইসলাম বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের শুরু থেকেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে ইলিশ একটু বেশি ধরা পরছে একারণে আমাদের অভিযান আরও পরিচালনা হবে। নৌ পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রমাণ পেলে কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে। 

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর