বগুড়ায় দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ভোট গ্রহণ শেষে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট গণনা চলছে। ভোট কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীদের কর্মীরা ফলাফল নিতে অপেক্ষা করছেন। ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বড় ধরনের কোনো ঘটনা ছাড়ায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়।
রবিবার সরকারি ছুটি থাকায় সকাল ৮টা থেকে ভোট প্রদান শুরু হলে ভোটাররা শীতের আমেজ ভেঙ্গে ভোট কেন্দ্রে আসেন। উপস্থিতি সংখ্যা কম থাকায় ভিড় এড়িয়ে শৃঙ্খলভাবে ভোট প্রদান করেন ভোটাররা। শহরে একেবারেই যানবাহন চলাচল না থাকায় ভোটাররাও এসেছেন ধীরে ধীরে। দুপুরে উপস্থিতি কম থাকলেও বিকালে কিছুটা ভিড় বাড়ে।
বগুড়া শহরের সিটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্রে আসা ৭৩ বছরের কামরুল ইসলাম জানান, তিনি হয়তো এবারই শেষ ভোট দিলেন। বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে আগামী ভোট পাবেন কি না তার জানা নেই। তিনি জানান, ভোট দিতে কোন সমস্যা হয়নি। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা তাকে বেশ সহযোগিতা করেছেন। এমন শৃঙ্খল পরিবেশ থাকলে মানুষ ভোট দিতে উৎসাহ পাবে।
আাইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক টহলের মাঝেও গত শনিবার রাতে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় একদল যুবক। বগুড়া ভান্ডারি স্কুল ভোট কেন্দ্রে, আটাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে, সরকারি আজিজুল হক কলেজ পুরাতন ভবন ভোট কেন্দ্রে, করোনেশন ইনস্টিটিউশন ভোট কেন্দ্রে, এরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে, তাপসি রাবেয়া ভোট কেন্দ্র ও নিশিন্দারা স্কুল এন্ড কলেজ ভোট কেন্দ্রের বাহিরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এদিকে বগুড়া-৭ আসনে গত শনিবার রাতে গাবতলীর পৌর এলাকার কমপক্ষে ১০টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)- ১২ ও বগুড়া জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি পুলিশ জানায়, রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিহার ইউনিয়নের বিহার বন্দরের একটি ভবন থেকে ৬টি তাজা ককটেল উদ্ধার করা হয়।
বগুড়া জেলা প্রশাসক ও জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ শেষে এখন গণনা চলছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল প্রদান করা হবে। জেলার ৭টি সংসদীয় আসনে ৫৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বগুড়া জেলায় মোট ২৮ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৪ ভোটার। এর মধ্যে নারী ভোটার ১৪ লাখ ২৪ হাজার ৯ জন ও পুরুষ ভোটার ১৪ লাখ ৪ হাজার ৩০৯ জন। এছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ২৬ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার বেড়েছে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭২০ জন। জেলার ৯৬৯টি ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
জানা যায়, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে। ভোটের মাঠে পুলিশের পাশাপাশি, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি ৩৭ জন নির্বাহী ও ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও ৭টি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি তাদের টহল কার্যক্রম পরিচালনা করেন। জেলায় ২৬ প্লাটুন বিজিবি, ২৮ প্লাটুন সেনা সদস্য ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি পুলিশের ১৫০টি ও র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।
বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, বগুড়ায় পরিবেশ শান্ত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল