তীব্র দাবদাহে পুড়ছে রাজশাহী অঞ্চল। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। নানা রোগে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই দাবদাহ আরো কিছুদিন চলবে। এদিকে এ অঞ্চলে তীব্র খরায় পানি সংকট প্রকট হচ্ছে। বাড়ছে ফসলের ক্ষতি। ফলে ত্রিমুখী সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ।
জানতে চাইলে রাজশাহী অঞ্চলের আবহাওয়াবিদ রহিদুল ইসলাম বলেন, 'অতি নিকটে এ অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। তবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের পর বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর বরেন্দ্র অঞ্চল কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে পুরো ৩টি কৃষি মৌসুমের চাষাবাদ হয়েছে। এতে পানির স্তর ৪ ফিট নেমে গেছে। তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়নে পানি সংকট সবচেয়ে বেশি। ফলে প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে গৃহস্থালি ও খাবার পানি সংগ্রহ করছেন বাসিন্দারা। একই চিত্র বাঘাসহ অন্যান্য উপজেলায়। গভীর নলকূপেও উঠছে না পানি। চাষাবাদে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র সংকট। ফসলি মাঠ ফেটে চৌচির। শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের চারা। গাছে গাছে ঝড়ছে গুটি আম।
ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) গবেষণার তথ্যমতে, রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলের ৭১ ভাগ এলাকা মাঝারি, উচ্চ ও অতিউচ্চ পানি সংকটাপন্ন। গবেষকদের আশঙ্কা, এভাবে পানির স্তর নামতে থাকলে আগামী ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলের ভূগর্ভ পানিশূণ্য হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া রিসোর্স অনুসারে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় সংকট আরও বাড়ছে। খরা প্রবণ এই এলাকায় বেশি চাষ হয় ধান। কিন্তু সবচেয়ে বেশি পানি লাগে এই চাষাবাদে। সুবিধাভোগীদের স্বার্থ হাসিলে অপরিকল্পিত গভীর নলকূপ তৈরির কারণে দীর্ঘমেয়াদি পানির সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত পানির স্তর নিচে যাচ্ছে। তাই সরকারি উদ্যোগে এ অঞ্চলে কম পানিতে বেশি উৎপাদনযোগ্য ফসল চাষাবাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। তাছাড়া কৃষকের পানির অপচয়রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নদী ও পুকুর খননের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ করে চাষাবাদ করা। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে। ফলে সংকট কিছুটা হ্রাস পাবে।
এদিকে তীব্র গরমে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ফলে রাজশাহী মেডিকেলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর চাপ। মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ দিনে ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর ও হিটস্ট্রোকসহ গরমজনিত নানা রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুইশত শিশুসহ পাঁচ শতাধিক রোগী। এছাড়া বহির্বিভাগে দুই হাজার শিশুসহ তিন হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ১ হাজার দুইশ' শয্যা বিশিষ্ট হলেও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় তিন হাজার রোগী।
এ ব্যাপারে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, রোগীর চাপ বাড়লেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাসাধ্য সেবা দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফলে গরমে ডায়রিয়া ও হিটস্ট্রোক সহ অন্যান্য রোগব্যাধি থেকে সুস্থ থাকতে বাসি খাবার ও হঠাৎ গরম থেকে এসে ঠাণ্ডা পানি পান ত্যাগ করা এবং তীব্র রোদে অবস্থান না করার পরামর্শ দেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল