ফেনীর দাগনভূঞার রাজাপুর, সিন্দুরপুর, পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মধ্যে কেউ ফিরছেন বাড়িতে। আবার কেউ নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন অন্যত্র। সোমবার দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুরে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য।
রাজাপুর মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা জাফর আহম্মদ তার দোকান দেখিয়ে বলেন, এটাই তার একমাত্র সম্বল। বন্যার পানির জোয়ারে তার দোকানের সাটার পর্যন্ত ভেঙ্গে গেছে। বাড়িতে এখনও হাঁটু পানি। তার সকল ফার্নিচার নষ্ট হয়ে গেছে। দোকানে এখন কোন মালামাল নেই। সব পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কিভাবে তিনি আবার ব্যবসা শুরু করবেন ও বাড়ির আসবাবপত্র জোগাড় করবেন সে চিন্তায় তার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। একই পাড়ায় কথা হয় মোবারক নামে এক ব্যক্তির সাথে। তিনি জানান এটা তার শ্বশুড় বাড়ি। বন্যার পানি বেশি থাকায় তিনি আসতে পারেননি। এখন শ্বশুরের পরিবারের সদস্যদের দেখতে এসেছেন। এখনও তার শ্বশুড়ের একতলা ঘরে পানি রয়েছে। এখানে বসবাস করার কোন পরিবেশ নেই। তাই তাদেরকে নিজ বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। একই ইউনিয়নের মুন্সির হাটের নুর নাহার জানান, বন্যা শুরু হওয়ার পর তিনি তার মেয়ের জামাইর বাড়িতে চলে যান। এখন বাড়িতে এসে দেখেন ঘরে কিছুই নেই। লেপ-তোষক সবগুলো পানিতে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাড়িতে থাকার কোন পরিবেশ নেই। সোলেমান নামের এক যুবক বলেন, তোদের ফ্রিজু পুরো মাছ মাংস ছিলো। সব নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো আবার তাদের পানিতেই ফেলতে হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। গ্রামের অনেক মানুষ ডায়রিয়ায় ভুগছেন।
পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের হামিদ জানান, তারা দুই ভাই ঢাকায় থাকেন। বাড়িতে তাদের বৃদ্ধ মা-বাবা আছে। বন্যার পানি যখন ঘরে এক হাঁটু উঠে যায় তখন কোন রকম জীবন নিয়ে তারা বাড়ি ছেড়ে দাগনভূঞায় তাদের আরেক চাচার তিন তলা বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এখনও বাড়ির উঠানে কোমর সমান পানি। এরই মধ্যে তার বাবা ঘর থেকে নেমে সড়কে আসলে একটি গাড়ি তাকে চাপা দেয়। তিনি এখন কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ফেনী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিতিৎসার জন্য কুমিল্লায় প্রেরণ করে। ডাক্তারদের ধর্মঘট চলায় কুমিল্লা মেডিকেলে ভর্তি হয়েও চিকিৎসা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে তাদের পিতাকে ভর্তি করে।
এদিকে জেলার নিম্নাঞ্চল এখন প্লাবিত রয়েছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতিন দিকে রয়েছে। প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি খুব ধীর গতিতে নামছে। যেভাবে পানি নামছে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
বাড়ি ফেরা বিভিন্ন মানুষ জানান, তাদের সাজানো সংসারের সব কিছু বন্যায় ধবংস করে দিয়েছে। কারো বাড়িতেই বর্তমানে কোন ফার্নিচার ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ব্যবহার উপযোগী নেই। বাড়ির কোন লেপ-তোষকও আর ব্যবহার করা যাবে না।
বন্যায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ২৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা বন্যা চলাকালীন বিভিন্ন সময় মৃত্যু বরণ করেন। বন্যায় জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ দুর্যোগের শিকার হয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল