স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানি নামার আগেই ফেনী জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। হাসপাতালে বেড না পেয়ে মেঝে ও খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সরা।
ফেনী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য জেনারেল হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে আটগুন বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। এসব রোগীদের এজমা, চর্মরোগ, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এতে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সরা।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়াডে ১৮ বেডের বিপরীতে রয়েছে ২০০ জন ভর্তি রোগী। সোমবার সকালে এই হাসপাতালে মোট ডায়রিয়া রোগী ছিলেন ১৭৩ জন। এর মধ্যে ১৪০ জন নারী ও শিশু। ডায়রিয়াসহ মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৬৮ জন।
শুধু ডায়রিয়া ওয়ার্ড নয় পুরো হাসপাতালের একই চিত্র। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে খোলা আকাশের নিচে দেখা গেছে প্রায় ৫০ জন রোগীকে। তারা জানান, বন্যার শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর থেকেই বড় ছোট সবার ডায়রিয়া শুরু হয়েছে। বেডের সংখ্যা কম থাকায় মেঝেতে ও বাইরে খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। দেখা যাচ্ছে গাছের ডালের সাথে স্যালাইন বাঁধতে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের রোগীর স্বজনদের। জেনারেল হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনের খোলা চত্বরে শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের বাইরে গাছের নিচে শুইয়ে রাখা হয়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত চার বছরের শিশু সাইদুল ইসলামকে। পাশে তার চার মাসের ভাই মো. আবদুল্লাহ। গাছের সঙ্গে বাঁধা রশিতে ঝোলানো হয়েছে তাদের স্যালাইন। পাশে বসে আছেন তাদের বাবা তাইজুল ইসলাম। ‘তিন দিন ধরে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তিনি হাসপাতালে আছেন বলে জানান। হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে বাধ্য হয়ে গাছতলায় দুই শিশু সন্তানের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
আট মাসের শিশু মো. আজহারুলের মা লায়লা বেগম জানান, গতকাল সকালে তিনি তার সন্তানকে নিয়ে চার দিন হাসপাতালে এসেছেন। শাহানা বেগম নামে আরেক মা জানান, তার শিশু সন্তান সাইফুল ইসলামকে নিয়ে পাঁচ দিন আগে হাসপাতালে আসেন। শয্যা না পাওয়ায় তারা হাসপাতালের সামনে খোলা চত্বরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিশু সন্তানরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। বেড না পেয়ে গাছতলায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জানাগেছে গাছতলায় চিকিৎসা নেয়া শিশুদের রাতে বাসায় নিয়ে যান তারা।
২০ আগস্ট থেকে ফেনীতে বন্য দেখা দিলেও ২৫ আগস্ট থেকে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই দিন রোগীর সংখ্যা বেশি হারে বাড়ছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ তারা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হাসপাতাল থেকেও দেয়া হচ্ছে না প্রয়োজনীয় ওষুধ।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স সবিতা রানী জানান, তাঁদের ওয়ার্ড ১৮ শয্যার। কিন্তু রোগী ১৪০ জন। বাধ্য হয়ে বাইরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। আর লোকবল সংকটের কারণে সেবাও বিঘ্ন ঘটছে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. জালাল আহমেদ বলেন, বন্যায় ফেনীতে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী রয়েছে। এদের বেশির ভাগ জ্বর, ডায়রিয়াসহ ঠান্ডা জনিত রোগী। তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে ডাক্তার নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার পরেও আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, হাসপাতালে তিন মাস ধরে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নেই। নেই পর্যাপ্ত মেডিকেল অফিসার। নার্সের সংকটও রয়েছে। ওষুধের সংকটও রয়েছে। হাসপাতালটি বন্যায় ডুবে যাওয়ায় কিছু ওষুধ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে রোগীদের কিছু ওষুধ বাইর থেকে কিনতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ওষুধের জন্য চাহিদা দিয়েছি। দুই একদিনের মধ্যেই ওষুধ চলে আসবে।
বিডি প্রতিদিন/এএম