বন্যায় লক্ষ্মীপুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ কৃষক। আমন ধান রোপনের মৌসুমে বানের জলে নষ্ট হয়েছে ৫০ শতাংশ ফসলি জমি। বহু ঘামে ফলানো সোনালী আউশও নষ্ট প্রায় ৩০ শতাংশ। যাতে চরম বিপাকে কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ইতিমধ্যেই ২২৭ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে কৃষি খাতে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অধিদপ্তর।
সরেজমিন লক্ষ্মীপুর সদরের লাহারকান্দি ইউনিয়নের সৈয়দপুর, আব্দুল্লাহপুর, শাকচর ঘুরে দেখা গেছে বানের জলে ডুবেছে সোনালী ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠ।
চলার পথে লক্ষ্মীপুর সদরের পশ্চিম সৈয়দপুরের দেখা হয় কৃষক আলতাফের সঙ্গে। কোমড় পানিতে দাঁড়িয়ে ধানের ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যাস্ত তিনি। জানতে চাইলে এ কৃষক বলেন, ‘স্বপ্ন ভাঙ্গি গেছে। মাস খানেক আগে ৪ বিঘা জমিনে আমন ধানের চারা রুখছি। খরচ হয়ছে ১ লাখ টাকারও বেশি। এখন সব পানির নিচে তলায় গেছে। এখন ধান না হলে চাইল কিনি খাইতো হইব। সরকার কিছু সহযোগিতা করলে বাঁচুম নইলে শেষ।’
পাশের ভবানীপুর গ্রামের বর্গাচাষি শাহজাহান মিয়া রয়েছেন আরও বিপাকে। অন্যের জমিতে ধান ফলাতে ঋণ করে বীজ বুনেছেন অর্ধ লক্ষ টাকার। কয়েক ধাপে তা নষ্ট হলেও হাল ছাড়তে নারাজ এই কৃষক। তিনি বলেন, ‘ ঋণ করে বীজ হালাইছি, ৫০ হাজার টাকা খরচা গেছে, একবার পালাছি নষ্ট হই গেছে, আবার পালাইছি এখন যদি নষ্ট হইযা তাইলে আর কোন উপায় নাই সবশেষ। ৪ ছেলে মেয়ে নিয়ে খুঁজি বিচারি খাইতো হইবো। আর সরকার যদি কিছু দেয় দিল না দিলে মাঠে মারা যামু।’
জানা যায়, কৃষিপ্রধান লক্ষ্মীপুরের বন্যা কবলিত এলাকার চিত্র একইরকম। জেলা জুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর কৃষি জমি। অধিকাংশ তলিয়ে আছে এখনও।
এদিকে এতোদিনের পরিশ্রমে ফলানো পাকা আউশ ধানও ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক। প্রায় ৩০ শতাংশ ধানই হয়েছে নষ্ট। উপার্জনের অন্যতম অবলম্বন কৃষি জমির এমন দূরাবস্থায় মাথায় হাত জেলার কৃষকদের। দুঃখ মাড়িয়ে তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় তারা। হতবিহল এসব মানুষকে কিছুটা আশা জোগাতে পারে দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর সহায়তা, এমনটিই ভাবছেন সচেতন মহল। এদিকে ভয়াবহ এই ক্ষয়ক্ষতি চিন্তায় ফেলেছে জেলার কৃষি বিভাগকেও।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: শামসুদ্দীন ফিরোজ সোহেল বলেন, তুলনামূলক উঁচু এলাকায় বীজতলা থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করছেন কৃষকরা। স্বপ্ন দেখছেন ভাগ্য ফেরানোর। বন্যায় ক্ষত্রিগস্থ কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বীজ, সার ও নগদ অর্থ দেয়া হবে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।
বিডি প্রতিদিন/এএম