ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার সিটি ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গর্ভবতী এক মায়ের আল্টাসনোগ্রাফির ভুল রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের আড়মুখী গ্রামের আবু জাফর খার স্ত্রী নাসিমা বেগম অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ৩১ মে কালীগঞ্জ উপজেলা মেইন বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত সিটি ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল সেন্টারে যান আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে। প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক রাহুল কর নাসিমা বেগমের আল্ট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট প্রদান করেন। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী নাসিমা বেগমকে জানানো হয়, তার গর্ভে যমজ শিশু রয়েছে। এর মধ্যে একটি বাচ্চার ওজন ৬৫৩ গ্রাম এবং অপরটির ওজন ৫৯৩ গ্রাম। রিপোর্টটিতে বাচ্চা দুইটির পজিশন অর্থাৎ অবস্থানও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। অথচ নাসিমা বেগম ১২ সেপ্টেম্বর আড়মুখী গ্রামে নিজ বাড়িতে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।
প্রতিষ্ঠানটির ভুল রিপোর্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও আর্থিক ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আবু জাফর খাঁ ও নাসিমা বেগম দম্পতি। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী নাসিমা বেগম মুঠোফোনে জানান, আল্ট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টে ভুল তথ্য দেওয়ায় আমাদেরকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। রিপোর্টে দুইটি বাচ্চার কথা বললেও আমার মনে নানা রকম সন্দেহ হয়। যে কারণে আমি একাধিক ডাক্তার দেখাই ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট করি। তিনি আরও বলেন, এভাবে ভুলভাল রিপোর্ট দিয়ে মানুষের ক্ষতি করা ঠিক না। নাসিমা বেগমের স্বামী আবু জাফর খাঁ জানান, আমার স্ত্রীর আল্ট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট ভুল দিয়েছে সিটি ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল সেন্টার। যে কারণে আমরা কালীগঞ্জের অন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ঝিনাইদহ সদরের সমতা ডায়াাগনস্টিক সেন্টারে পুনরায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি করি এবং ডাক্তার দেখাই। এই দুই প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে আমার স্ত্রীর গর্ভে একটি বাচ্চা রয়েছে বলে জানা যায়। শেষমেষ আমার স্ত্রী একটি সুস্থ ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। কালীগঞ্জের সিটি ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল সেন্টার ভুল রিপোর্ট দিয়ে আমাকে হয়রানি, আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং আর্থিকভাবে ক্ষতি করেছে। আমি এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি ডায়গনস্টিক এন্ড মেডিকেল সেন্টারের সাথে সম্পৃক্ত একজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিটি ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল সেন্টার ব্যবসা পরিচালনা করলেও বর্তমানে তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষার মান খুব নিম্নমানের। তাছাড়া বর্তমানে সঠিক নিয়ম নীতি মেনে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটি চলছে মেয়াদউত্তীর্ণ সরকারি লাইসেন্স দিয়ে। বর্তমানে সিটি ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল সেন্টারের স্বত্ত্বাধিকারী দাবি করা রুহুল আমিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মাসখানেক হতে চলল আমি প্রতিষ্ঠানটি দেখভাল করছি। পূর্বে কি ঘটেছে সেটা আমি বলতে পারবো না। ভুল রিপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে ভোক্তা হয়রানির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীর আল্ট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট ভুল প্রদান করা হলে নানা রকম জটিলতা উত্তর তৈরি হতে পারে। সিটি ডায়াগনস্টিক এন্ড সেন্টার যদি ভুলভাল রিপোর্ট প্রদান করে তাহলে তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন আলম জানান, সিটি ডায়াগনিস্টিক এন্ড মেডিকেল সেন্টারের ভুল রিপোর্ট প্রদানের তথ্য সঠিক প্রমাণিত হলে ওই প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল