সন্ত্রাস নির্মূলে 'ত্বকী মঞ্চ'র আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশে দুর্বৃত্ত, মাফিয়া, গডফাদারদের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তার নির্দেশে সাড়ে এগার বছর ত্বকী হত্যার বিচারটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার প্রক্রিয়া আবার শুরু করলেও তদন্তের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নিয়ে যেমনি প্রশ্ন রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে ঘাতক ওসমান পরিবারের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন।
রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪১ মাস উপলক্ষে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
রফিউর রাব্বি বলেন, আজকে আমরা ত্বকী হত্যার এক যুগের কাছে দাঁড়িয়ে ত্বকী, সাগর-রুনি, তনুসহ নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার দ্বারা নিহত সকল হত্যার বিচার চাই। পরিবর্তীত বাংলাদেশে পতিত স্বৈরাচারদের পুরুত্থান মানবো না। নারায়ণগঞ্জে বিগত পনের বছর ওসমান পরিবারের লুটপাটের সহযোগীরা এখনো আইনের আওতার বাইরে রয়েছে। কেউই গ্রেফতার হয়নি। বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তারা বহাল তবিয়তে রয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দেশে বিচার-ব্যবস্থাকে যেভাবে ধ্বংস করে রেখেছে তার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন এখনো হয়নি। দেশে সকল ধর্মের, সকল মত ও পথের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এখনো বাধা রয়েছে। দেশ অর্ধ-শতাধিক মাজার ও খানকা ভাঙা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় লালন অনুসারিদের মেলা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দেড়-দুই হাজার ছাত্র-জনতার প্রাণদান, পাঁচ শতাধিক চিরতরে অন্ধ হয়ে যাওয়া, সতের হাজার আহত হওয়ার বাংলাদেশ বিচারহীনতার বাংলাদেশ হতে পারে না।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিক, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম ও ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুইদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল