মাসে চার হাজার টাকা ও দ্রুত জামিনে বের করে আনার প্রতিশ্রুতিতে রাজশাহীর যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ প্রথম আদালতে একটি মামলায় এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামির পরিবর্তে ভাড়ায় জেল খাটছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক যুবক।
মাদকাসক্ত দিনমজুর ওই যুবককে আদালতে হাজিরের ব্যবস্থা করে মূল আসামি। এরপর আড়াই মাস ধরে কারাগারে আছে এই যুবক। ভাড়ায় জেল খাটা ওই যুবকের নাম মো. মিঠুন (৩২)।
তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে।
আর সাজাপ্রাপ্ত আসামির নাম মো. সেতাউর রহমান (৩৯)। তিনি একই উপজেলার বিশ্বনাথপুর এলাকার সেরাজুল ইসলামের ছেলে। এবং মেসার্স চাঁদ ব্রেড অ্যান্ড বেকারি নামের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি।
সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যুগ্ম দায়রা জজ আদালত-২’এ অন্য আরেকটি মামলায় তাকে হাজির করলে প্রকাশ্যে আসে পুরো ঘটনা। এমন অমানবিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যান বিচারক। পুরো ঘটনার বিবরণ জবানবন্দিতে রেকর্ড করেন বিচারক।
মামলার বাদীর আইনজীবী আবদুল মালেক বলেন, আমি সেতাউর রহমানের বিরুদ্ধে ৭৫ হাজার টাকার একটি চেকের মামলা করি। দীর্ঘসময় ধরে ট্রায়াল শেষে আদালত সেতাউর রহমানকে এক বছরের সাজা ও চেকে বর্ণিত টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। কিন্তু অর্ধেক টাকা জমা দিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন তিনি। তাতে হাইকোর্ট তার সাজা কমিয়ে ১৫ দিন করে এবং তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধের সময় দেয়। বাকি টাকা সে আমাকে চলতি মাসেই পরিশোধ করেছে। তাই আমি আদালতে পিটিশন দাখিল করেছি। কিন্তু সম্প্রতি আদালতে আসামিকে হাজির করলে দেখা যায়, সেতাউর রহমানের বদলে মো. মিঠুন নামে একজনকে হাজির করা হয়েছে। এ সময় আদালতের কাছে পুরো ঘটনা স্বীকার করেছে মিঠন। অন্যদিকে সেতাউর প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
রাজশাহীর আদালতে সেতাউর রহমানের আরেকটি চেকের মামলার বাদী সাজেদুর রহমান বলেন, ৭০ লাখ টাকার চেকের মামলায় সেতাউর রহমানকে এক বছরের সাজা প্রদান করেন আদালত। কিন্তু আদালতের কাছে গত বছরের ২৭ অক্টোবর সে আত্মসমর্পণ না করে মিঠুন নামের একজনকে হাজির করে।
পরে জানা যায়, সেতাউরের বদলে সাজা খাটছে মিঠুন। এতে আমাদের সন্দেহ হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে এসে জানতে পারি সেতাউরের বদলি হিসেবে মিঠন নামের একজন সাজা খাটছে।
এ বিষয়ে আদালতে মিঠুন বলেন, আমি নেশা করতাম। তাই ভালো হওয়ার জন্য সাবেক মেম্বার সেতাউরের কাছে গেলে সে আমাকে বলে তুই কিছু দিন জেলে থেকে আয়। এই কথা বলে সে আমাকে রাজশাহীতে নিয়ে গিয়ে শেষবারের মতো নেশা করিয়ে বলে, তুই শুধু আমার নাম ও আমার বাবার নাম বলবি। তুই জেলে কিছু দিন থাকলে ভালো হয়ে যাবি। আর খুব তাড়াতাড়ি তোকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনে একটি রিকশা কিনে দেব। আর তোর ও তোর পরিবারের খরচ আমি চালাব।
মিঠুন আরও বলেন, দুই মাস ২৫ দিন ধরে জেলে আছি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন মেহেদী বলেন, একজন আসামির সাজা আরেকজন অর্থের বিনিময়ে ভোগ করছে। এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এখানে সবাইকে সতর্ক হওয়া উচিত। যেহেতু সেতাউরের বদলে সাজা ভোগ করছে মো. মিঠুন, সেহেতু উভয়েই সমান অপরাধী।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত