যাত্রীদের নিরাপত্তা ও রেলওয়ে সম্পত্তি রক্ষায় কাজ করে আসছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। সম্প্রতি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ট্রেন থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে আরএনবি সদস্যদের। আরএনবি না থাকার কারণে ট্রেনে নিরাপত্তা শঙ্কায় রয়েছে যাত্রীরা। বিশেষ করে রাতের বেলা ট্রেন যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে টিকিটহীন যাত্রীদের কারণে। ফলে প্রতিদিন ঘটছে নানা রকম অপ্রীতিকর ঘটনা- অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বিভিন্ন দপ্তরাদেশে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক আন্তঃনগর, মেইল, লোকাল এবং মালবাহী ট্রেনে ২-৩ জন আরএনবি সদস্য মোতায়েন থাকতো। গত ৪ মে পূর্বাঞ্চল জিএম'র এক অফিসিয়াল নোটে উল্লেখ করা হয়, ‘২০ এপ্রিল এ মর্মে আদেশ প্রদান করা হয়, নির্দেশনা মোতাবেক যে সকল ট্রেনে আরএনবি এসকর্ট দেয়ার বিধান নেই সে সব ট্রেনে এসকর্ট বুক করা যাবে না। কিন্তু উক্ত নির্দেশ অমান্য করে ট্রেনসমূহে আরএনবি এস্কর্ট বুক করা হচ্ছে। এবিষয়ে চিফ কমান্ড্যান্ট আরএনবিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো’। এ নোট দেখে ওইদিন পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট আরএনবির আশাবুল ইসলাম এক চিঠির মাধ্যমে সকল যাত্রীবাহী আন্ত:নগর ট্রেনে আরএনবি সদস্য মোতায়েন স্থগিত করেন।
চিঠিতে তিনি বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চরের জিএমের মৌখিক নির্দেশে ৫ মে থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সকল যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনে আরএনবি সদস্য মোতায়েন বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
অভিযোগ উঠেছে, রেলওয়ে আউটসোর্সিংয়ের একটি চক্রকে সুবিধা দিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ যাত্রীবাহী ট্রেনে আরএনবি থাকলে টিকিবটহীন যাত্রী উঠতে পারে না। যাত্রীদের নিরাপত্তায় সারারাত জেগে তারা দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু আরএনবি না থাকলে আউটসোর্সিয়ের স্টাফরা টিকিটহীন যাত্রী তুলতে সুবিধা হয়। প্রতিটি যাত্রীদের কাছ থেকে ২০০-৫০০ টাকা আদায় করে নিজেদের পকেট ভারি করে। এছাড়াও ট্রেনে চুরির ঘটনার সাথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আউটসোর্সিংয়ের লোকজন জড়িত থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ সুবক্তগীন বলেন, আমি আরএনবি প্রত্যাহারের বিষয়ে কোন ধরনের নির্দেশনা দেয়নি। ট্রেনে আরএনবি সদস্যদের ডিউটি করার নিয়ম থাকলে তারা করতে পারে। এ ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।
জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলের আরএনবির চিফ কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।
রেলওয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার শাকিলা সোলতানা বলেন, যাত্রী ট্রেনে তিনজন করে রেলওয়ে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। আরএনবি এখানে সাময়িক দায়িত্ব পালন করেছিল। এখন আরএনবি না থাকার কারণে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য রেলওয়ে পুলিশের এখন যে তিনজন করে দায়িত্ব পালন করছে, তা যদি আরো বাড়ানো যায় তা হলে যাত্রীদের জন্য আরো ভালো হবে।
আরএনবি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরএনবিকে ক্রমেই অলস বাহিনীতে পরিণত করতে খোদ রেলওয়ের একশ্রেণীর কর্মকর্তারাই নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন। টিকিটবিহীন যাত্রী পরিবহণ বাড়িয়ে একটি মহল রেলকে অকার্যকর করতে আবারও উঠে পড়ে লেগেছে। আরএনবি সদস্য প্রত্যাহারের ফলে ট্রেনে যন্ত্রাংশ চোর চক্র এবং মাদক চোরাকারবারিরা যেমন মাথাচারা দিয়ে উঠবে পাশাপাশি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের মতো গার্ড ও লোকোমাস্টাররাও আছেন আতঙ্কে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল