ঢাকার উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারানো মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরীকে নীলফামারীর জলঢাকায় তাঁর নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে পৌরসভার বগুলাগাড়ী গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
মেহেরীন চৌধুরী ছিলেন রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কো-অর্ডিনেটর ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খালাতো ভাই মহিদুর রহমান চৌধুরী ও ছাদেরা চৌধুরী দম্পতির মেয়ে। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী মনছুর হেলাল ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।
স্বামী মনছুর হেলাল জানান, ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বের হওয়ার সময় বিমান দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ সময় মেহেরীন সামান্য আঘাত পায়। কিন্তু ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভেতরে আটকা পড়ে। সে শিক্ষার্থী আটকা পড়ার বিষয়টি মোবাইলে আমাকে জানায় এবং তাদের উদ্ধারে ভেতরে প্রবেশ করে। শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের সময় সে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয়। মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় তাকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে রাত ১০টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
মেহেরীন চৌধুরীর প্রতিবেশী আব্দুল জব্বার জানান, দুই ঈদ ও মাঝেমধ্যে গ্রামে আসতেন মেহরীন। এ সময় এলাকার গরিব মানুষকে আর্থিক সহযোগিতা করতেন তিনি। স্থানীয়ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কালভার্ট নির্মাণেও সহযোগিতা করেছেন। তিনি শিক্ষানুরাগী হওয়ায় বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে তাঁকে মনোনীত করেছিল এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য, সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর যখন আগুন ও ধোঁয়ায় চারদিক ছেয়ে যায়, তখন শিক্ষক মেহেরীন ক্লাস থেকে বের হচ্ছিলেন। ক্লাসে বাচ্চারা আটকে পড়ায় নিজের জীবন বাজি রেখে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে শুরু করে। এ সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্তত ২০ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেন। তাঁর সাহসিকতায় শিক্ষার্থীরা প্রাণে রক্ষা পেলেও তিনি নিজে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন এবং পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেন।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ