টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি এখন কিছুটা উন্নতি হলেও, ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে ফেনী জেলায়। জেলার পাঁচটি উপজেলায় এবারকার বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে দেড়শ কোটি টাকারও বেশি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বিশেষ করে গ্রামীণ সড়ক, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ওপর পড়েছে মারাত্মক প্রভাব। ১২৬টি গ্রামীণ সড়কসহ ৩০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ৯০ কোটি টাকা।
জেলার ছয়টি উপজেলায় ২,৩৩০টি পুকুর, দীঘি ও মাছের খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৬৫ লাখ টাকার বেশি। কৃষিখাতে ৩,৪৭০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে।
পরশুরামের ধনীকুন্ডা এলাকার কৃষক গোলাম রহমান জানান, “আমার ৫ বিঘা জমির সবজি সম্পূর্ণ পানির নিচে চলে গেছে। গত বছরের ক্ষতির ঘা এখনো ভুলতে পারিনি, তার উপর এবার আরও বড় ক্ষতি। কীভাবে চলবো বুঝতে পারছি না।”
ফুলগাজীর আনন্দপুর ইউনিয়নের মাছচাষি মোঃ আবদুল্লাহ বলেন, “ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দুইটি বড় মাছের প্রজেক্ট চালু করেছিলাম। ৪০ লাখ টাকার মাছ ছিল। অর্ধেক কোনোরকমে বাঁচালেও বাকিটা পানিতে ভেসে গেছে।”
অন্যদিকে পরশুরামের অলকা গ্রামের মাছচাষি আরিফুর রহমান জানান, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মাছ রক্ষার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, “ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা চূড়ান্ত তথ্য সংগ্রহে কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সরকারের কাছে পাঠানো হবে প্রণোদনার জন্য।”
প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রেও একই দুরবস্থা। ফুলগাজীর মদিনা পোল্ট্রি খামারের মাহফুজ আলম জানান, “বন্যার পানিতে আমার খামারের ১,৫০০ মুরগি মারা গেছে। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, “বন্যায় খাতটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারিভাবে সহায়তা বরাদ্দ হলে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।”
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বলেন, “বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। দেড়পাড়াসহ কিছু এলাকায় সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।”
এদিকে এলজিইডির ফেনী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক জানান, “১২৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফুলগাজী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই থেকে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ৪১টি স্থানে বাঁধ ভেঙে জেলার পাঁচটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়। এতে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিডি প্রতিদিন/আশিক