বঙ্গোপসগর উপকূলে সুন্দরবনের আলোরকোল, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকেল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শেলার চরে ৮১ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে দেশের সর্ববৃহত অস্থায়ী দুবলা জেলে পল্লীতে রবিবার ভোর থেকে শুরু হচ্ছে শুঁটকি আহরণ মৌসুম।
দেশের ৮০ ভাগ শুঁটকি মাছ আহরণ করতে শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে লোকালয় ছেড়ে ১০ হাজার জেলে-বহরদার সুন্দরবনের এসব চরের অস্থায়ী শুঁটকি জেলে পল্লীতে থেকে সাগরের মাছ আহরণ করে শুঁটকি করবেন। উত্তাল সাগর, বনদস্যুসহ বন্যপ্রানীদের নিয়ে জীবনের ঝুঁকি ও মহাজনের ঋণের বোঝা নিয়ে দুবলার অস্থায়ী শঁটকি পল্লীতে যাওয়া জেলেরা মৌসুম শেষে আগামী ১৫ মার্চ সুন্দরবন ছেড়ে আবারো নাড়ীর টানে বাড়ী ফিরবেন।
সুন্দরবন বিভাগ বলছে, শুঁটকি আহরণ মৌসুমে এবার শুঁটকি পল্লীতে থাকা জেলে-বহরদারদের জন্য ৯০০ অস্থায়ী ঘর, ১০০টি ডিপো ও বিভিন্ন নিত্যপন্যের ৮০টি দোকান ঘর তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব শুঁটকি পল্লীতে সুদূর কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে সরঞ্জাম নিয়ে এখন সাময়িক বসতি গড়ে তুলতে ব্যস্ত জেলেরা। দু’এক দিনের মধ্যে দুবলার শুঁটকি পল্লীতে তৈরি হয়ে যাবে অস্থায়ী জেলে গ্রাম। একই সাথে তারা ফিশিং ট্রলার নিয়ে সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ করে শুঁটকি করবেন।
খুলনার ডুমুরিয়া এলাকার বহদ্দার (মৎস্য ব্যবসায়ি) রবিন বিশ্বাস বলেন, ‘প্রতি মৌসুমে আমরা বিভিন্নভাবে ঋণ করে সুন্দরবনের দুবলা শুঁটকি পল্লীতে যাই। এ বছরও ঋণ করে ফিশিং ট্রলারসহ জেরেদের নিয়ে শুঁটকি পল্লীতে এসছি। সরকারি ভাবে আমরা কোন সাহায্য সহযোগিতা পাই না। সুন্দরবনে মুক্তিপনে দাবিতে বনদস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। আমরা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আতংকে আছি। বনদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে সাগরে সার্বক্ষনিক নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের টহল দেওয়ার দাবি জানাই।’
বাগেরহাটের শারণখোলা ও মোংলার জেলে আজাদ হোসেন, কামরুজ্জামান পাইক, দ্বীপক মল্লিক ও অরুপ গাইন বলেন, ‘সুন্দরবন বিভাগের পাস নিয়েই আমরা দুবলার চরের শুঁটকি পল্লীতে এসেছি। প্রতি মৌসুমেই ধার দেনা করেই আমাদের শুঁটকির জন্য মাছ ধরতে আসি। তবে অনেকে এবার সুদে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় স্বর্ণের জিনিস রেখে টাকা আনতে হয়েছে। দীর্ঘদিন সাগরে গত কয়েক বছর বনদস্যুদের উৎপাত না থাকলেও এবার ৭টি বনদস্যু বাহিনী তৎপর রয়েছে দেখা যাচ্ছে। ঝড়-জলোচ্ছাসের প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি মাথায় নিয়েই দুবলার শুঁটকি পল্লীতে ১০ হাজার জেলে এসেছি। বনদস্যুদের উৎপাত বন্ধ ও ঘনঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে এবার তারা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন বলেও জানান এসব জেলে।’
বাগেহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সুন্দরবনের বন্যপ্রানী শিকার বন্ধসহ কোনো গাছপালা কাটতে ও ব্যবহার করতে পারবে না। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বনের ক্ষতিসাধনের অপচেষ্টা চালায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুঁটকি পল্লীতে অস্থায়ী ঘর নির্মাণে জেলেরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্গে নিতে হবে এমন নিষেধাজ্ঞা মেনেই ৯০০ অস্থায়ী ঘর, ১০০টি ডিপো ও বিভিন্ন নিত্যপন্যের ৮০টি দোকান ঘর তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের অস্থায়ী জেলে পল্লীতে দেশের ৮০ ভাগ শুঁটকি উৎপাদন হয়। গত শুঁটকির মৌসুমে দুবলার শুঁটকি থেকে বন বিভাগের রাজস্ব আদায় হয়েছিল সাড়ে ৬ কোটি টাকা। ঘনঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে আশা করছি এবার শুটকি খাত থেকে সুন্দরবন বিভাগের ৮ কোটি টাকার মত রাজস্ব আদায় হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক