১৫ মার্চ, ২০১৯ ২০:২১

অনশন চলছেই, খোঁজ নেয়নি প্রশাসন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

অনশন চলছেই, খোঁজ নেয়নি প্রশাসন

সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন বাতিল পুনরায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্যের সামনে শিক্ষার্থীদের অনশন চলছে। শুক্রবার অনশনরতদের নিয়ে বের করা হয় ভুখা মিছিল। এর আগে দুপুরে তাদের সাথে দেখা করতে আসেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরু। চতুর্থ দিনের মত অনশন চললেও তাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ দেখা করতে আসেনি।

জানা যায়, অনিয়মের অভিযোগে ডাকসু ও হল সংসদের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচন ও ভোট জালিয়াতিতে জড়িত থাকা ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে রাজু ভাষ্কর্যের সামনে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে অনশনে বসেন চার শিক্ষার্থী। গত চার দিনে তাদের সাথে যোগ দেয় আরও চার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে চারজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা অনশন অব্যাহত রেখেছেন। উপাচার্য বা তার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ এসে যতক্ষণ না তাদের আশ্বস্ত করছেন ততণ পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবার কথা বলেছেন তারা।

এদিকে, বিকেলে অনশনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ভুখা মিছিল বের করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেয়। মিছিলটি রাজু ভাষ্কর্য থেকে শুরু হয়ে উপাচার্যের বাসভবন হয়ে কলাভবনের সামনে দিয়ে আবার রাজু ভাষ্কর্যে এসে শেষ হয়। এ সময় মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের হাত ধরে মাইকে গান পরিবেশন করে তাদের দাবি তুলে ধরতে দেখা যায়। মিছিলের মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়েন অনশনকারী শোয়েব মাহমুদ অনন্ত। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। মিছিল শেষে মিম আরাফাত মানব নামে আরও এক অনশনকারী অসুস্থ হলে তাকেও হাসপাতালে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।

অনশনকারী শিক্ষার্থীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাওহীদ তানজিম, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাঈন উদ্দিন, দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য মণ্ডল, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রনি হোসেন এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাফিয়া তামান্না। পরে তাদের সাথে যোগ দেন মীম আরাফাত মানব ও রবিউল ইসলাম। এর মধ্যে অনিন্দ্য মণ্ডল ও রবিউল ইসলামের শারিরীক অবস্থার অবনতির হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে অনিন্দ্য আবার অনশনে যোগ দিয়েছেন।

এদিকে চতুর্থ দিনের মত অনশন চললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ অনশনকারীদের সাথে দেখা করেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী  ‘নায্য’ দাবিতে চারদিন যাবত অনশন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ তাদের সাথে দেখা করেনি।

বিষয়টি নিয়ে ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, যারা আন্দোলন করছে তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু ভিসি, প্রো-ভিসি, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ন্যূনতম কোন খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে না। প্রশাসনের এই যে হঠকারী আচরণ, শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব না নেওয়ার প্রবণতা এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্র হতে পারে না। এ ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণার কথাও বলেন তিনি।

গণভবনে যেতে পারেন নুরু: ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শনিবার গণভবনে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে, সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদে’র নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন ধরনের মতামত দিতে দেখা যায়। তবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার ব্যাপারে স্বয়ং ডাকসুর ভিপি নুরুল হক ‘ইতিবাচকভাবে যাওয়ার পক্ষে’ বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও মেয়েদের হলে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্যানেলগুলোর সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি আশা করি, তারা রাজি হবেন।

শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জুমার নামায আদায় শেষে রাজু ভাষ্কর্যে অনশনকারীদের সাথে দেখা করতে আসেন নুরুল হক। এরপর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ডাকসুর ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর নুরুল হকের ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করতে এবং আমার ইমেজ ক্ষুন্ন করতে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। তবে এখন কোনভাবেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নই। আমি এখন একটি সংগঠনে বিশ্বাস করি। তাই অন্য কোন দলে যাওয়ার কোন প্রশ্ন নেই।

অনশনকারীদের সাথে প্রশাসনের কেউ দেখা করতে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নায্য কথা একজন বললেও তা আমলে নেওয়া উচিত। আমি তাদের দাবির সাথে একমত। 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর