শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

হজম

দিলীপ গুহঠাকুরতা

হজম

ইদানীং আমার নিকটজনদের অনেকের কাছ থেকে একই স্বগতোক্তি শুনতে পাই 'যা-ই খাই, আরাম নাহি পাই'।

অর্থাৎ আকুর ঢেঁকুর ভুটভাট, এরপর বদমেজাজ, তারপর বদহজম, অতঃপর যা হওয়ার তাই...। পরিশেষে সব রণে ভঙ্গ, চামচে গ্লাসে টুং টাং জলতরঙ্গ। স্যালাইন আর মেট্রোনিডাজল দিয়ে কতদিন আর এভাবে শরীরের জলস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন ঠেকাবেন আর কোষ্ঠকে আড়ষ্ট করবেন। হয়তো বলবেন, এর থেকে নিষ্ক্রান্তের 'গুরু উপায় বল না'।

যদি দীর্ঘজীবী হতে চান, যদি 'মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই' হয় আপনার মূলমন্ত্র, তবে গোপনে আপনাকে একটি তন্ত্র শিখিয়ে দিই, যতই সুখাবারের সুখবর পান, 'হজম না হওয়া পর্যন্ত পুনরায় আহারে বসবেন না।' মন্ত্রটা আমার মনোজাত নয়। অনেক দিন আগে বাংলার রম্যরচনার মহাগুরু সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা থেকে শেখা।

এর সঙ্গে আমি যোগ করি, যখন আহার করবেন, তখন করবেন না উদরপূর্তি, তাহলে উদর হবে অগি্নমূর্তি। অর্থাৎ জঠর রাজ্যে আগুন জ্বলবে। আর আগুন আসবে অম্ল বা এসিড থেকে। আর এই এসিডের

আগুনের কি গুণ, তা তো ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। মহল্লার দুষ্ট লোকদের একতরফা প্রেমে সাড়া না দেওয়ায় কত কোমলমতি সুন্দরী মেয়েদের মুখ এসিডে ঝলসে যায়, এই এসিড সন্ত্রাস রোধে দেশে দেশে কত আইন! আর আপনার উদরের যে এসিড, তাকে বাগে আনতে না পারলে কোনো তন্ত্রমন্ত্র কাজে আসবে না, সে যে অন্ত্রের দেয়াল ফুটো করে দেবে। তখন পকেট মিরপুর স্টেডিয়াম হলে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে ঘরে বসে ধুঁকতে হবে। আর ট্যাকে মাল-কড়ি থাকলে বাকি জীবন ডাক্তার কোবরেজের কাছে গিয়ে নতুন দীক্ষা নিতে হবে এটা খাওয়া যাবে তো ওটা খাওয়া যাবে না। অর্থাৎ আহারের আনন্দ একেবারেই সংহার। আর যদি আহারের আনন্দই না থাকবে, তবে সাহারা মরুর বালুঝড়ের মতো ধূসর হবে ধরণীর সব বস্তুবিত্তের বাহার, সাঙ্গ হবে সব রঙ্গ-রসের সমাহার।

তাই সব গুরুচণ্ডালিকা বাদ দিয়ে মোদ্দা কথায় আসি, এক আসনে আহারে উদরপূর্তি করবেন না আর পুরোপুরি হজম না হওয়া পর্যন্ত করতে হবে চোখের দুরন্তপনার শাসন, জিভের নিয়ন্ত্রণ তা সে আসুক না যত বড় রাজভোগেরই নিমন্ত্রণ।

এই দেখুন আপনাদের সঙ্গে হজমের কড়চা করতে করতে আমার পেটের খাবার কখন হজম হয়ে এখন উল্টো ছুঁচোর কেত্তন শুরু হয়েছে। তাই আহারে বসার আগে এই আহার সম্পর্কে প্রায় ২৩ বছর আগে বরেণ্য বাকশিল্পী প্রয়াত অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস স্যারের কাছে একটা শোনা কৌতুক আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। দেখবেন একই 'আহার' শব্দটির শ্রেণী ভেদে কী বিচিত্র ব্যবহার।

গল্পটা অনেক পুরনো।

থানার দারোগাবাবু হাঁক দিলেন, এই মাঝি নৌকো ঘাটে লাগাও, অপারেশনে যাবো। নৌকোর ভেতর থেকে মাঝি বললো, বাবু একটু সবুর করেন, আমি ভোজন করছি।

দারোগা চিৎকার করে উঠলেন, কী রে হতভাগা। তুই আবার ভোজন করছিস কি রে! ভোজন করার মানে বুঝিস? বর্ধমানের রাজাধিরাজরা ভোজন করেন, ইংরেজ সাহেব সুবারা আহার করেন, আমরা পুলিশ, উকিল, মোক্তার, রাজকর্মচারীরা খাই, আর তোরা তো গিলিশ। ব্যাটা, এক্ষুনি গেলা শেষ করে নৌকো ঘাটে লাগা।

 

 

সর্বশেষ খবর