আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স (অ্যামচ্যাম) আজ রাজধানীর শেরাটন হোটেলে "বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত: অগ্রযাত্রার পথ" শীর্ষক এক সংলাপের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি মো. মাহমুদ হাসান খান এবং পরিচালক ফয়সাল সামাদ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে অ্যামচ্যাম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের উপর নির্ভরশীলতা অত্যন্ত বেশি-যেখানে তৈরি-পোশাক খাত মোট রপ্তানির ৮১.৫% এবং জিডিপির ১১% জুড়ে রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র যথাক্রমে মোট রপ্তানির ৪০% এবং ১৭.৬% গ্রহণ করে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিবর্তনের সাথে অর্থনীতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। ভারত ও ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের পশ্চিমা বাজারের উপর নির্ভরতা বেশি। এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের তথ্য তুলে ধরে তিনি সতর্ক করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১-২ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে, আর বাণিজ্য অনিশ্চয়তা ও সুরক্ষাবাদ বিনিয়োগ ও আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। এছাড়াও তিনি রপ্তানি বাজারে বৈচিত্র্য আনার জন্য ও সক্রিয় নীতিমালা প্রণয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান এ. এইচ. এম. আহসান তৈরি-পোশাক খাতে বৈচিত্র্য আনার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন-অর্থাৎ নিম্নমূল্যের পণ্য থেকে উচ্চমূল্যের পণ্যের দিকে অগ্রসর হওয়া। এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রাক্কালে ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে তিনি উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. মাহমুদ হাসান খান বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটকে আরএমজি খাতের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন, বিশেষত গ্যাসনির্ভর ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পে। বর্তমানে মাত্র দুটি এফএসআরইউ (Floating Storage and Regasification Unit) চালু থাকায় তিনি অবকাঠামো সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং ৫৪টি এলওআই হঠাৎ করে বাতিলের সমালোচনা করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে পুনঃআলোচনার আহ্বান জানান।
সৌরবিদ্যুতের জন্য মার্চেন্ট পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টকে স্বাগত জানালেও জমির স্বল্পতাকে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, মধ্য ও নিম্নমানের অনেক কারখানা প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা সূচক অনুসরণ করে না, ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিজিএমইএর প্রায় ৭,১০০ সদস্যের মধ্যে বর্তমানে ৩,০০০-এরও কম সদস্য রপ্তানিতে সক্রিয় রয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন আংশিক রপ্তানিকারকদের জন্য ব্যাংক-সমর্থিত বন্ড সুবিধা চালুর প্রস্তাবসহ নীতিগত সংস্কারের কথা উল্লেখ করেন, যা ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি সম্ভব করবে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের ফলে নতুন রপ্তানি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং "১০০ বিলিয়ন ডলার আরএমজি এক্সপোর্ট সেল" গঠন করা হচ্ছে, যা জ্বালানি, ব্যাংকিং ও কর সংক্রান্ত সমন্বয়কে ত্বরান্বিত করবে। তিনি বিশ্বাস করেন, সঠিক সহযোগিতা ও খাতের বৈচিত্র্যের মাধ্যমে ২০২৭-২০২৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি অর্জন করতে পারবে।
অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতা, বড় ব্র্যান্ডের অনুপস্থিতি, ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজের দুর্বলতা, নীতি সমন্বয়ের অভাব, স্বয়ংক্রিয়ীকরণ, সবুজ উৎপাদন, সৌরবিদ্যুৎ এবং লজিস্টিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। উচ্চ খরচ, সীমিত তারল্য ও দুর্বল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলোও আলোচনায় আসে।
আলোচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিনিয়োগ ইকোসিস্টেম মহাপরিচালক গাজী এ.কে.এম. ফজলুল হক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব (শুল্ক: রপ্তানি ও বন্ড) মোঃ নাজিউর রহমান মিয়াও বক্তব্য রাখেন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর মি. পল ফ্রস্ট এবং লেবার অ্যাটাশে মিস লিনা খানও উপস্থিত ছিলেন।
অ্যামচ্যামের ট্রেজারার আল-মামুন এম রাসেল, আরএমজি খাতের অ্যামচ্যাম সদস্য, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা এই আলোচনায় অংশ নেন। সভা শেষে এ. এস. এম. মঈনুদ্দিন মোনেম উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন/ইই