বাংলাদেশে রুফটপ সোলারের (ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ) ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অগ্রগতি মূলত অর্থায়নের অভাবে আটকে আছে। বর্তমানে এই খাতে সীমিত প্রণোদনা থাকলেও তা তাৎক্ষণিক কার্যকারিতা পাচ্ছে না; অর্থায়ন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এখনও প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আছে। ছোট ছোট প্রকল্পের জন্য একত্রীকরণ, বান্ডলিং বা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা টুল না থাকায় সেগুলো বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হচ্ছে না। ইডকল ইতোমধ্যেই অফ-গ্রিড সোলার ও বড় প্রকল্পে সফলতা দেখিয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলো লিজিং, প্রজেক্ট ফাইন্যান্সিং, ‘পে-অ্যাজ-ইউ-সেভ’ মডেল এবং গ্রিন বন্ডের মতো নতুন আর্থিক প্রডাক্ট চালু করতে পারে, যা বিনিয়োগ ঝুঁকি কমাবে এবং টেকসই মুনাফা নিশ্চিত করবে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রুফটপ সৌলার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা না গেলে ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ‘সোলার রুফটপ ফাইন্যান্স উন্মোচন: একটি টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যতের পথে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউএবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরইএ) এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়।
বিএসআরইএ’র সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-গভর্নর নূরুন নাহার। সঞ্চালনায় ছিলেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির (সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট) খোন্দকার মোরশেদ মিল্লাত।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগ, স্রেডা, ইডকল, বিভিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা, বাণিজ্যিক ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই), উন্নয়ন অর্থায়ন সংস্থা (ডিএফআই), উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএসআরইএ’র সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, এই খাতে সম্ভাবনা থাকলেও বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অর্থায়ন। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসছে মাত্র ৫.৬ শতাংশ বিদ্যুৎ, যা আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। তিনি বলেন, বর্তমানে রুফটপ সোলারের কোনও বিকল্প নেই। এটিই এখন সবচেয়ে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য, টেকসই ও কার্যকর সমাধান।
অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, দেশে রুফটপ জ্বালানির প্রসার এখনও কম। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বর্তমান সরকার তিন হাজার মেগাওয়াট সোলার রুফটপ কর্মসূচি বাস্তবায়নের যে লক্ষ্য নিয়েছে তা এত কম সময়ে কিভাবে বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি সফল করতে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্রেডা-কে নীতি আরও স্বচ্ছ, স্থিতিশীল ও বেসরকারি খাতবান্ধব করতে হবে। ডিস্ট্রিবিউশন ইউটিলিটি কোম্পানিগুলোকে নেট মিটারিং সহজ করতে হবে এবং গ্রিড সংযুক্তিতে সহায়তা করতে হবে। রুফটপ সোলার ফাইন্যান্সই বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরবর্তী সীমান্ত। রুফটপ সোলার গ্রিন ফাইন্যান্স রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে, গ্রিন বন্ড, ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স ও রেজাল্ট-বেইসড ফাইন্যান্সিং মডেল চালু করতে এবং সরকার, ব্যাংক, বেসরকারি খাত ও ডিএফআইগুলোর সমন্বয়ে একটি গ্রিন ফাইন্যান্স টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/একেএ