বৃহস্পতিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

আমার প্রথম কাগুজে সন্তান

সাইফুর রহমান

আমার প্রথম কাগুজে সন্তান

বোধকরি ১৯০০ সালের শুরুর দিকের কথা, সাহিত্যে 'কুন্তলীন' নামে একটি পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল। গল্প লিখে 'কুন্তলীন' পুরস্কার পাওয়াটা সে যুগে একটা শ্লাঘার বিষয় ছিল। কেননা 'কুন্তলীন' পুরস্কার পেলেই লেখক হয়ে উঠতেন। পত্রিকা সম্পাদকরা 'কুন্তলীন' পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখককে সমীহ করতেন, লেখা ছাপানোর সুযোগ বেড়ে যেত। 'কুন্তলীন' তেল কোম্পানির মালিক যে বার্ষিক বইটি প্রকাশ করতেন তার প্রচারও ভালো ছিল। কুন্তলীনের প্রবর্তক হেমেন্দ্র মোহন বসু- H. Bose বলেই যিনি ছিলেন প্রখ্যাত, প্রতি বছর 'কুন্তলীন' প্রতিযোগিতায় গল্প চাইতেন। ভালো গল্পের জন্য মর্যাদানুসারে ৩০ টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার দিতেন। শর্ত ছিল রসহানি না করে গল্পের মধ্যে 'কুন্তলীন দেলখোশের' নাম উল্লেখ করা চাই। তবে এ নাম গুঁজতে হবে সুকৌশলে। যাতে গল্পগুলো কোনোমতে 'কুন্তলীন দেলখোশের' বিজ্ঞাপন বলে কেউ ভুল না করেন। 'কুন্তলীন' পুরস্কারের প্রসঙ্গটি এখানে এলো এ কারণে যে, আজ লেখার এই শিরোনামটি ঠিক করতে হলো অনেকটা আমার নিজেরই প্রয়োজনে। নিয়মিত-অনিয়মিত কিংবা ঢিমেতালে লেখালেখি করছি অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাহিত্য সাময়িকীগুলোতে প্রকাশিত সব লেখা একত্র করলে এতদিনে নিদেনপক্ষে চার-পাঁচটি বই প্রকাশ হওয়ার কথা। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেই ধীরে চলো নীতিতে বিশ্বাসী বলে একটি বইও এ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এই একুশে বইমেলায় আমার প্রথম কাগুজে সন্তানটি প্রসব করছে। আমি নাম দিয়েছি তার 'জানা বিষয় অজানা কথা'। ভাবলাম পৃথিবীর খ্যাতিমান লেখকদের প্রথম বইটি কীভাবে প্রকাশিত হয়েছিল, পাঠকদের সেই গল্প শোনানোর ছদ্মবেশে কুন্তলীন দেলখোশ তেলের মতো আমার বইটির একটি বিজ্ঞাপন হয়ে যাবে- যেন এখানে আমার ওষুধের আমিই ক্যানভাসার। রাখঢাকবিহীন নির্লজ্জ এই পন্থার আশ্রয় নিতে হলো প্রধানত দুটি কারণে। এর মধ্যে প্রথমটি মুখ্য ও দ্বিতীয়টি গৌণ। প্রধান কারণটি হলো আমার বইটির প্রকাশক- 'প্রকৃতি' প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী কবি সৈকত হাবিব অর্থে-বিত্তে কিছুটা নিষ্প্রভ হলেও হৃদয় ও মনের ঔদার্যে তিনি টাটা, বিড়লা কিংবা মিত্তাল বলেই আমার বিশ্বাস। আমার মতো অখ্যাত ও অজ্ঞাত কুলশীল একজন লেখকের বই ছাপিয়ে যেন তিনি আর্থিক সংকটের সম্মুখীন না হন সেটাই আমার অন্যতম প্রধান বিবেচ্য। এমনিতেই নতুন লেখকদের বই ছাপানোর প্রকাশক খুঁজে পাওয়া বর্তমানে অতি দুষ্কর। অনেক প্রকাশকই বুনো ভালুকের মতো ওত পেতে থাকেন। কীভাবে নতুন লেখকদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া যায়? কারণ কাঁঠালের মৌসুম তো একটাই। তারা সেটা হাতছাড়া করতে চাইবে কেন?

সঙ্গত কারণেই একটি প্রশ্ন সামনে এসে যায়। মানুষ কেন লিখে? কীভাবে একজন মানুষ ক্রমেই লিখিয়ে হয়ে ওঠে? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলে দেখা যাবে এর সহজ কোনো উত্তর নেই। প্রশ্ন একটি কিন্তু উত্তর অনেক। ভিন্ন ভিন্ন লেখকের ভিন্ন ভিন্ন মত। বিখ্যাত 'অ্যানিমেল ফার্ম' গ্রন্থের জনক জর্জ অরওয়েলের মতে, একজন মানুষের লেখক হওয়ার পেছনে কাজ করে মূলত চারটি কারণ- প্রথমটি সমাজে নিজেকে বুদ্ধিদীপ্ত ও জ্ঞানী প্রমাণ করতে, দ্বিতীয়টি নান্দনিক ও শৈল্পিকতা ফুটিয়ে তুলতে, তৃতীয়টি ইতিহাসের প্রতি সুবিচার করতে ও চতুর্থটি মানুষ প্রকৃতপক্ষে একটি সামাজিক জীব এ কারণে। বিখ্যাত ইংরেজ কবি লর্ড বায়রন বলতেন, "আমি যদি আমার হৃদয়-মনে যা এসে জমা হয় সেগুলো উদ্গিরণ না করি তবে মনে হয় আমি 'উদ্ভ্রান্ত ও উন্মাদ' হয়ে যাব"। আমার অন্যতম এক প্রিয় গল্পকার নরেন্দ্রনাথ মিত্র মনে করেন, লেখার প্রেরণা প্রথম কোত্থেকে আসে এর জবাব দেওয়া সহজসাধ্য নয়। তবে সন্ধানে আনন্দ আছে। বলা যায় আরও পাঁচটি প্রবণতার মতো এও একটি প্রবণতা কারও কারও মধ্যে থাকে। সহজাত বলেই তাকে মনে হয়। অনুকূল পরিবেশে তা ক্রমে পরিপুষ্ট হয়। প্রকাশের জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠে। যারা ভাগ্যবান তারা একে সারা জীবনের সঙ্গিনীরূপে পান। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই ইনি ক্ষণসঙ্গিনী। প্রেমের মতোই এর আবির্ভাব যেমন রহস্যময়, অন্তর্ধানের পথও তেমনি দুর্নিরীক্ষ। তবে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে বিখ্যাত মার্কিন সাহিত্যিক উইলিয়াম ফকনারের উক্তিটি। যিনি মনে করেন, শিল্পে যে পূর্ণতার স্বপ্ন আমরা দেখি তা আজ পর্যন্ত কেউ পায়নি। সব সৃষ্টির মধ্যে অপূর্ণতা রয়ে যায় বলেই লেখক ও শিল্পী তাদের সাধনা অব্যাহত রাখেন। একজন শিল্পী কিংবা লেখক সৃষ্টির অনুপ্রেরণা লাভ করেন অদৃশ্য এক দৈত্যের তাড়নায়। তার আদেশ না মেনে যেন মুক্তি নেই। কেন যে দৈত্য তাকেই নির্বাচন করেছে, লেখক কিংবা শিল্পীর তা জানা নেই; জানার সময়ও নেই। চুরি করে হোক, ডাকাতি করে হোক, ভিক্ষা করে হোক লেখককে যেন দৈত্যের আদেশ পালন করতেই হয়। আবার এর উল্টাটাও ঘটতে দেখি অনেক লেখকের জীবনে। কোনো একটি জিনিসের প্রতি একজন লেখক এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েন যে, সেই আসক্তি মেটাতেই তিনি লিখে চলেন পাগলের মতো করে। ফ্রান্সের বিখ্যাত লেখক বালজাক (১৭৯৯-১৮৫০) লিখে কিছুটা খ্যাতি পেয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু আরও বেশি পরিচিতি পেয়েছিলেন তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য। বালজাকের আসক্তি ছিল ক্লাব, রেস্তোরাঁ, দামি পোশাক-পরিচ্ছদ ও উৎকৃষ্ট কফি-পানে। তিনি এতটাই বিলাসী জীবনযাপন করতেন, প্যারিসে সে সময় এমন প্রচার ছিল যে, বালজাক আসলে 'গ্রান্ড মোগল'। তিনি লিখে তো কিছু টাকা আয় করতেন বটে কিন্তু তার বিলাসী জীবনের বেশিরভাগ আসত ঋণ করে। কমপক্ষে লাখ টাকার ঋণ বালজাকের মাথার উপর সবসময়ই ছিল। পাওনাদার সর্বদা পেছনে লেগে থাকত। আদালতের পেয়াদা এসে আসবাবপত্র ক্রোক করেছে। কখনো কখনো পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে কিংবা কয়েকদিনের জন্য আত্দগোপন করে সাময়িকভাবে তিনি রক্ষা পেতেন। শেষ পর্যন্ত দেনার দায়ে কিছুদিন জেল পর্যন্ত খাটতে হয়েছিল তাকে। আর এ ঋণের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি লিখতেন পাগলের মতো। রাতে ঘুম মাত্র ৪ ঘণ্টা। এই মুহূর্তে আমার আরেকজন লেখকের কথা মনে পড়ছে। মার্কিন কবি ও গল্পকার এডগার এলেনপোর কথা। পো সুরাপানে আসক্ত একজন লেখক। দিনরাত সর্বদা তিনি বুঁদ হয়ে থাকতেন মদের নেশায়। দিনের বেশির ভাগ সময় তার দেখা মিলত স্থানীয় পান-ভোজনালয়গুলোতে। পকেটে ফুটো কড়ি নেই। তারপরও সুরা পরিবেশক কিংবা পরিবেশিকাকে উদ্দেশ করে বলতেন, 'দে না ভাই মদিরাপাত্রটি আরেকবার পূর্ণ করে সামনের সপ্তাহেই আমার নতুন বই বেরুচ্ছে। সব দেনা শোধ করে দেব একসঙ্গে'। মদের নেশায় চুঁড় এমন একজন মানুষ কীভাবে লিখতেন এমনসব কালজয়ী কবিতা ও গল্প। সেটি একমাত্র ঈশ্বরই বলতে পারেন। অন্যদিকে বিখ্যাত রুশ লেখক ফিয়োদর দস্তেয়ভস্কি লিখতেন জুয়ার নেশার টাকা জোগান দিতে।

আমার লেখক হওয়ার বাসনাটি অঙ্কুরোদ্গম হয় মূলত পাঠাভ্যাসের কারণে। শৈশব থেকেই বই পড়তে বেশ ভালো বাসতাম। অসাধারণ ভালো লাগত পড়তে। সেই থেকে হৃদয়ে লেখক হওয়ার কিশলয় উদ্ভিদগুলো মুঞ্জরিত হয়ে উঠতে থাকে। আমার জীবনে লেখালেখির সূত্রপাত ঘটে যখন আমি সবেমাত্র দশম শ্রেণির ছাত্র। তখন বয়সের দোষে হোক কিংবা অন্য কোনো কারণেই হোক একটু-আধটু কবিতা-টবিতা লিখতাম। বেশ ছোটবেলা থেকেই পাঠাভ্যাস গড়ে উঠেছিল বলে অনেক পত্রিকারই গ্রাহক ছিলাম। সেই সূত্রে জাতীয় শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত 'শিশু' পত্রিকাটিও আসত আমার হাতে। একদিন ঝোঁকের বশেই শিশু পত্রিকায় পাঠিয়ে দিলাম আমার একটি কবিতা। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। কবিতাটির নাম ছিল 'মেঘলা দিনে'। লেখাটি সম্ভবত পাঠিয়েছিলাম আষাঢ় মাসে। পরের শ্রাবণ কিংবা ভাদ্র মাসের সংখ্যায় আমার কবিতাটি ছাপা হয়ে গেল। সেটিই ছিল আমার জীবনের প্রথম মুদ্রিত কোনো সাহিত্যকর্ম। কী যে খুশি হয়েছিলাম সেটি ভাষায় প্রকাশ করা বেশ শক্ত।

আমার বাবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকুরে। তিনি তার অফিসের সতীর্থ বন্ধুদের সগর্বে তার পুত্রের এই সাহিত্যকর্ম দেখিয়ে বেশ আত্দপ্রসাদ অনুভব করেছিলেন। তবে এ কথা আমি বেশ জোর দিয়েই বলতে পারি সেই কৈশোরে যশ খ্যাতি কিংবা পাঠক-পাঠিকা ও ভক্তদের অতল সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার আশা-আকাঙ্ক্ষা কখনো মনে আসেনি। গৃহের ডাকবাক্সটি পূর্ণ হবে সহস্র পত্রপুঞ্জে কিংবা পুষ্পপত্রে, সেরকম আশাও করিনি কখনো। কামিনী কাঞ্চনে আমার আসক্তি নেই। তারপরও এ কথা স্বীকার করতেই হয় যৌবনে এসে যশ, খ্যাতির জন্য চিত্ত যেন প্রচ্ছন্নভাবে উন্মুখ। জুলিয়াস সিজারের সেই বিখ্যাত উক্তি Veni, Vidi, Vici, এলাম, দেখলাম, জয় করলাম- এর মতো করে প্রায়ই হৃদয়-মনে বাসনা জাগে ওরকম কিছু একটা লিখব। কেন নয়? শুধু একটি উপন্যাস লিখে কত লেখকই তো বিখ্যাত হয়েছেন। অদ্বৈত মল্লবর্মণের 'তিতাস একটি নদীর নাম' অরুন্ধতী রায়ের 'গড অফ স্মল থিংস' কিংবা আমেরিকার লেখক হারপার লি-এর 'টু কিল এ মকিংবার্ড'; এগুলোর প্রত্যেকটি ঔপন্যাসিকের একটি করে উপন্যাস আর বিশ্বসাহিত্যে এগুলো স্থানও করে নিয়েছে ক্লাসিক উপন্যাস হিসেবে। কিন্তু কলম ধরেই বুঝতে পারি লেখালেখির এ পথ কত দুর্গম ও প্রতিকূল। নিঃসন্দেহে এটি বড় কঠিন এক পথ পরিক্রমণ, সে বিশাল এক সংগ্রাম, হতাশা ও উঞ্ছবৃত্তির কণ্টকে আকীর্ণ পথ। কেবল লিখতে বসেই বুঝতে পারি আমার কল্পনাশক্তি যেন মরুভূমির মতো বন্ধ্যা। দূরদৃষ্টি যেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ কোনো ব্যক্তির মতো ক্ষীণ। সাদা কাগজে কিছু অাঁকিবুঁকি ছাড়া লেখা হয়ে ওঠে না তেমন কিছুই। সান্ত্বনা শুধু ইংরেজ সাহিত্যিক চালস ল্যামের একটি উক্তি, 'কালি যুক্ত হরফের সমন্বয়ে কিছু বাক্য সাদা কাগজের চেয়ে ঢের উত্তম'। অন্যদের লেখা যখন পড়ি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি তাদের লেখায় কত মণি-মাণিক্য, কী বিপুল ঐশ্বর্য! কিন্তু আমার বেলায় শুধুই নুড়ি-পাথর ও খুদ-কুঁড়ো। আমার এই খুদ-কুঁড়ো ও নুড়ি-পাথরগুলোর কয়েকটি একত্র করে সানন্দে ছাপাতে রাজি হলেন আমার প্রকাশক সৈকত হাবিব। সেদিক দিয়ে বলতে হয় আমি বেশ ভাগ্যবান। অথচ কত বিখ্যাত লেখকদের বই ছাপাতে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে বছরের পর বছর (শুধু বোধকরি আমাদের দেশের কিছু লেখক নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে বই ছাপেন, পৃথিবীর অন্য কোথাও এই ধরনের সংস্কৃতি খুঁজে পাওয়া যায় না)। প্রথমেই মনে পড়ে গেব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের কথা। ১৯৪৭ সালে মার্কেস যখন বোগোতার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্র- এল. এস্পেক্তাদোর কাগজে তার প্রথম ছোট গল্পটি বের হলো। পাঠক, শুনে অবাক হবেন যে, সেদিন একটি কানাকড়িও ছিল না মার্কেসের পকেটে। কি করে কিনবেন তিনি পত্রিকাটি? তারপর রাস্তার পাশে একটি স্থানে চুপচাপ বসে রইলেন কিছুক্ষণ। এক পথচারী যাচ্ছিলেন পাশ দিয়ে। তার হাতেই ছিল সেই পত্রিকাটি। মার্কেস সলজ্জ কণ্ঠে চেয়ে নিলেন সেটি। তারপর পড়লেন তার নিজের লেখা সেই গল্পটি। মার্কেসের লেখা প্রথম নভেলা 'লিফ স্টোর্ম' শেষ করার পর মার্কেসকে অপেক্ষা করতে হয় সাত সাতটি বছর। কারণ কোনো প্রকাশকই সেটি প্রকাশ করতে আগ্রহী ছিলেন না।

অবশেষে ১৯৫৫ সালে একজন প্রকাশক আগ্রহ দেখালে সেটি প্রকাশিত হয়। নোবেল জয়ী নরোজিয়ান লেখক ন্যুট হামসুন তার প্রথম উপন্যাস... লেখার পর দ্বারে দ্বারে হত্যে দিয়ে বেড়াতে লাগলেন বইটি প্রকাশ করতে। কিন্তু আফসোস প্রকাশক পাওয়া গেল না একটিও। কিছুদিন অপেক্ষা করার পর একটি অখ্যাত প্রকাশক রাজি হলেন বইটি ছাপাতে। বইটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল সেই অখ্যাত প্রকাশকটি রাতারাতি ধনী হয়ে উঠেছেন। প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটেছিল 'হ্যারি পটারের' লেখিকা জে কে রাউলিংয়ের ক্ষেত্রেও। লেখালেখি করতে গিয়ে তার স্বামী, সংসার সব কিছুই হারানোর মতো অবস্থা হয়েছিল। স্বামী তো তাকে ছেড়ে গেলেনই। দরিদ্রতা যেন শত বাহু দিয়ে রাউলিংকে এমনভাবে চেপে ধরল যেন তার বেঁচে থাকাটাই হয়ে উঠল একরকমের অভিশাপ। প্রায় বছর দেড়েক ধরে লিখলেন হ্যারি পটারের প্রথম খণ্ড। তারপর সেটা পাঠিয়ে দিলেন বারোটি প্রকাশনা সংস্থায়। আশ্চর্যের বিষয় বারোটি প্রকাশনালয় থেকেই ফেরত এলো তার পাণ্ডুলিপি! তিনি একেবারে ভেঙে পড়লেন। তার তখন অন্ন ও গৃহহীন অবস্থা। ইত্যবসরে বছরখানেক বিভিন্ন প্রকাশনায় দেন-দরবার করে অবশেষে সবুজ সংকেত পেলেন লন্ডনের একটি প্রকাশনা সংস্থা ব্লুমসবারি থেকে। সংস্থাটির কর্ণধার ব্যারি ক্যানিংহ্যাম রাউলিংকে দু'লাখ টাকার একটি অগ্রিম চেকও প্রদান করলেন। হ্যারি পটারের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হওয়ার পর যা ঘটল তা আমরা প্রায় সবাই জানি। কোটি কপিরও বেশি কাটতি হয়ে বইটি গড়ল ইতিহাস। বিলিয়নারদের খাতায় প্রথম মহিলা হিসেবে উঠল রাউলিং-এর নাম। বর্তমানে রাউলিং প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার মালিক। লিখে এত টাকা সম্ভবত আর কেউ আয় করতে পারেনি। প্রতি শব্দের জন্য রাউলিং প্রকাশকদের কাছ থেকে পান বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭০ হাজার টাকা। এটি সত্যিই এক বিস্ময়কর ব্যাপার!

লেখক : গল্পকার ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী।

ই-মেইল :[email protected]

 

সর্বশেষ খবর