আমরা প্রত্যেকেই কম-বেশি রসিকতা করি। ইসলামের দৃষ্টিতে রসিকতা দোষণীয় নয়। খোদ রসুল (সা.) নিজেও রসিকতা করতেন। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর কাছে একটা বাহনজন্তু চাইল। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমরা তোমাকে একটা উটনীর বাচ্চা দেব। লোকটি বলল, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি উটনীর বাচ্চা দিয়ে কী করব? রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সব উটই তো উটনীর বাচ্চা! (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৯৮)। রসিকতার যথাযথ প্রয়োগ আমরা অনেকেই জানি না। এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতার বড় অভাব। রসিকতা করতে গিয়ে আমরা সীমা লঙ্ঘন করে ফেলি। হাদিসে এমনটি করতে নিষেধ করা হয়েছে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা কর না এবং তার সঙ্গে পরিহাস কর না।’ (তিরমিজি : ১৯৯৫)। নিষেধাজ্ঞা এ জন্যই করেছেন যে, সাধারণত আমাদের রসিকতা হয় লাগামহীন, মিথ্যা এবং অন্যকে কষ্ট দেওয়া আমাদের রসিকতার সাধারণ বৈশিষ্ট্য। যা ইসলামী আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত।
রসিকতার ক্ষেত্রে শুধু বচন সত্য হওয়াই যথেষ্ট নয়; উদ্দেশ্যও সাধু হওয়া চাই। অসদুদ্দেশ্যে রসিকতা করা হলে যত সত্য কথা দ্বারাই হোক না কেন, তাকে কিছুতেই জায়েজ বলা যাবে না। তা হবে সম্পূর্ণ সীমা লঙ্ঘন ও নাজায়েজ। অনেক সময়ই রসিকতার উদ্দেশ্য হয় কারও চরিত্র হনন করা বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা। আজকাল এ জাতীয় পরিহাস বাক্য ব্যবহার অনেকটা সামাজিক কালচারে পরিণত হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা আমাদের নৈতিক অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ। মনে রাখতে হবে, অন্যকে আহত করে, এমন কোনো রসিকতা শরিয়ত অনুমোদন করে না। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! পুরুষরা যেন অপর পুরুষদের উপহাস না করে। তারা (অর্থাৎ যাদের উপহাস করা হচ্ছে) তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অপর নারীদের উপহাস না করে। তারা (অর্থাৎ যে নারীদের উপহাস করা হচ্ছে) তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অন্যকে কটাক্ষ কর না এবং একে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। (সূরা হুজুরাত : ১১)। আসলে রসিকতা তো এমন অকৃত্রিম আচরণকেই বলে যা অন্যের মনে প্রাণরস জোগায়। যে অসুস্থ আচরণ অন্যকে বিতৃষ্ণ করে তাকে আর যাই বলা হোক রসিকতা বলা যায় না কিছুতেই। রসিকতাকে পরিমিত করে তোলার জন্য সত্যকথন ও সদুদ্দেশ্যের সঙ্গে আরও দরকার স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় রাখা। একই কথা একস্থানে বা একসময় আনন্দদায়ী হলেও অন্যস্থান ও অন্যসময়ে তা বিরক্তকরও হতে পারে। ফলে আনন্দদানের লক্ষ্যে বলা কথা হয়ে উঠবে বেদনাদায়ক। যে কথা একাকী বলা যায় সব সময় তা মজলিশে বলা যায় না। সুতরাং কারও চরিত্র, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বংশ-পরিচয় বা সামাজিক অবস্থান নিয়ে যদি রসিকতাচ্ছলে এমন কিছু বলা হয়, যা তার মনোবেদনার কারণ হতে পারে, তবে তা ইসলাম অনুমোদিত রসিকতা নয়; বরং কোরআন মাজিদের ভাষ্যমতে তা হবে ফাসেকি কাজ, যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
লেখক : পরিচালক, নন্দীপাড়া মাদ্রাসায়ে সোনার মদিনা, বাসাবো, খিলগাঁও, ঢাকা
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        