শিরোনাম
সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

হযরত শাহজালাল (রহ.) ও ইবনে বতুতার মিথস্ক্রিয়া

আতাউর রহমান

হযরত শাহজালাল (রহ.) ও ইবনে বতুতার মিথস্ক্রিয়া

মধ্যযুগের দুজন কিংবদন্তি বিশ্ব-পর্যটক হচ্ছেন মার্কো পলো ও ইবনে বতুতা। প্রথমোক্ত জন ইউরোপ মহাদেশের ইতালির আর অন্যজন আফ্রিকা মহাদেশের মরক্কোর অধিবাসী। মার্কো পলো তাঁর বণিক পিতার সঙ্গে ভেনিস থেকে যাত্রা করে প্রায় সাড়ে তিন বছরে চীনের রাজধানী পিকিং তথা বর্তমান বেইজিংয়ে ১২৭৫ সালে পৌঁছেন এবং তৎকালীন চাইনিজ অধিপতি কুবলাই খানের অধীন ১৭ বছর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে কার্যনির্বাহের পর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ইবনে বতুতার প্রকৃত নাম ছিল মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ। ১৩২৬ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে জন্মস্থান তানজিয়ার থেকে পর্যটনের উদ্দেশে বেরিয়ে মিসর, প্যালেস্টাইন, মক্কা শরিফ, ইরাক ও পারস্য হয়ে রাশিয়া এবং ভারতবর্ষ পরিভ্রমণ শেষে সুদীর্ঘ ২৮ বছর পর ১৩৫৪ সালে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

মার্কো পলোর ভ্রমণ-কাহিনি ‘দ্য ট্রাভেল্স অব মার্কো পলো’ থেকে আমরা তৎকালীন প্রাচ্যের সভ্যতা, বিশেষত চাইনিজ সভ্যতার বিশদ বিবরণ পাই। আর ইবনে বতুতার সফরনামা ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব ইবনে বতুতা’ থেকে তৎকালীন মুসলিম সভ্যতার প্রায় পূর্ণাঙ্গ চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এঁদের দুজনের কেউই ভ্রমণ-কাহিনি স্বয়ং লিখেননিÑ মার্কো পলো স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর ১২৯৮ সালে এক নৌযুদ্ধে বন্দী হয়ে কারাবরণকালে রাস্টিসিয়ানো নামক এক লেখকের মারফত তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করান, আর ইবনে বতুতার সফরনামাও প্রতিলিখন সম্পাদন করেন ইবনে জুজায়ি নামক তাঁর এক স্বদেশি বন্ধু। সে যা হোক। আমরা কিন্তু মূলত বলতে চাইছি হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর সঙ্গে পর্যটক ইবনে বতুতার মিথস্ক্রিয়া বিষয়ে। অতএব, এ প্রসঙ্গ এখানেই সমাপ্ত করে প্রথমে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর প্রতি মনোনিবেশ করা যাক। আমরা অনেকেই জানি, হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর জন্ম জাজিরাতুল আরবের ইয়ামেন (ইয়েমেন) দেশে, যে কারণে তাঁর নামোল্লেখে প্রায়ই উচ্চারিত হয় হযরত শাহজালাল মুজাররদে ইয়ামেনি রহমাতুল্লাহ আলাইহি। সুফি পিতা কর্তৃক তাঁর নামকরণ হয়েছিল শেখ জালালুদ্দিন এবং শৈশবেই পিতৃবিয়োগের পর তিনি তাঁর মামা সুফি সাধক সৈয়দ আহমদ কবিরের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হন। প্রচলিত শিক্ষা গ্রহণের পর তিনি মামার কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভ করেন এবং উপযুক্ত সময়ে মামা তাঁকে একমুষ্টি মাটি প্রদানপূর্বক ভারতবর্ষে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে এসে সেই মাটির বর্ণ ও গন্ধের অনুরূপ মাটি যেখানে মিলবে সেখানেই আস্তানা স্থাপন করতে নির্দেশ দেন। নির্দেশানুযায়ী ভারতবর্ষে আগমনের পথে তিনি দিল্লিতে শেখ নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং নিজামুদ্দিন তাঁকে এক জোড়া কবুতর পাখি উপহারস্বরূপ দিয়েছিলেন, যার বংশানুক্রমিক ‘জালালি কবুতর’ আজ অবধি হযরত শাহজালালের দরগাহ ও সিলেটের অন্যত্র দেখতে পাওয়া যায় এবং পথিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বিবিধ দরবেশ তাঁর কাফেলায় যোগ দেওয়ায় শেষমেশ তাঁর সঙ্গী দরবেশের সংখ্যা ৩৬০-এ দাঁড়ায়। যাঁরা ছিলেন সত্যিকার অর্থেই দরবেশ তথা আধ্যাত্মিক সিদ্ধপুরুষ এবং তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ‘চাশনি পীর’ নামে পরিচিত; যাঁর মূল কাজ ছিল স্থানে স্থানে মাটি শুঁকে অতঃপর মতামত দেওয়া।

এদিকে, তৎকালীন সিলেট তথা গৌড় রাজ্যের অত্যাচারী হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দের পাপের বোঝা তখন কানায় কানায় পূর্ণ। সিলেট শহরতলির মুসলিম অধিবাসী বোরহান উদ্দিন তাঁর পুত্রসন্তানের জন্ম উপলক্ষে গরু কোরবানি করলে গৌড় গোবিন্দ গো-হত্যার অপরাধে সন্তানটিকে পিতার সামনেই গলা কেটে হত্যা করেন। তো তৎকালে বাংলার সুলতান ছিলেন শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ। চরম ক্ষুব্ধ বোরহান উদ্দিন তাঁর দরবারে বিচারপ্রার্থী হলে তিনি গৌড় গোবিন্দকে শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে প্রথমে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র সিকানদার গাজীর কর্তৃত্বাধীনে একটি সেনাবাহিনী পাঠান। কিন্তু সিকানদার গাজী দুবার বিফলকাম হলে পর সুলতান তাঁর সেনাপ্রধান নাসির উদ্দিনকে যুদ্ধের দায়িত্ব গ্রহণের নির্দেশ দেন। এই সন্ধিক্ষণে হযরত শাহজালাল ও তাঁর ৩৬০ আউলিয়া তথা দরবেশগণ মুসলিম সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেন এবং গৌড় গোবিন্দকে পরাস্ত করে সিলেটে মুসলিম কর্তৃত্ব কায়েম করেন। ওটা ছিল ১৩০৩ সালের ঘটনা। আর হ্যাঁ, তাঁর মামা আহমদ কবির কর্তৃক প্রদত্ত একমুষ্টি মাটির বর্ণ ও গন্ধের সঙ্গে সিলেটের মাটি সম্পূর্ণ মিলে যাওয়ায় হযরত শাহজালাল (রহ.) সঙ্গীসহ সিলেট শহরেই আস্তানা স্থাপন করেন এবং সকল শ্রেণি, বর্ণ ও বিশ্বাসের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জনে সক্ষম হন। তিনি আজীবন অকৃতদার থেকে মহান আল্লাহর উপাসনা ও ধ্যানে অতিবাহিত করেন এবং ১৩৪৬ সালে ওফাতপ্রাপ্ত হন। আজ অবধি প্রতিদিন বিভিন্ন গোত্র ও ধর্মের সহস্রাধিক মানুষ সিলেট শহরে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা ফাতিহা পাঠ করেন।

এবারে আসি হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর সঙ্গে ইবনে বতুতার সাক্ষাৎ ও মিথস্ক্রিয়া পরিবেশনায়। ইবনে বতুতা ১৩৪৫ সালে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর সঙ্গে মিলিত হন এবং তিন দিন তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করেন। উপাখ্যানটি খুবই চমৎকার ও চিত্তাকর্ষক : ইবনে বতুতা তাঁর সফরনামায় লিখেছেন, তিনি দুই দিনের পথ দূরে থাকতেই হযরত শাহজালালের চার শিষ্যের দেখা পেয়েছিলেন, যাঁরা তাঁকে বললেন, শেখ আমাদের বলেছেন, পশ্চিম দেশের একজন সফরকারী তোমাদের কাছে এসেছেন, তোমরা গিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা কর। অথচ তাঁর সম্পর্কে শেখ কিছুই জ্ঞাত ছিলেন না। তিনি আরও লিখেছেন, তাঁদের সঙ্গে শেখ জালালুদ্দিন তথা শাহজালালের আস্তানায় পৌঁছে তিনি প্রত্যক্ষ করেন যে সেখানে কোনোরকম আবাদি জমি নেই, অথচ মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে স্থানীয়রা নানা ধরনের উপহারসামগ্রী নিয়ে আসেন, যেগুলো দিয়ে দরবেশ ও মুসাফিরদের ব্যয় নির্বাহ হয়। আর শেখের নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য ছিল একটি মাত্র গাভী যার দুধ দিয়ে প্রতি ১০ দিন অন্তর তিনি ইফতার করতেন। এতদ্পরবর্তী অত্যাশ্চর্য ঘটনা ইবনে বতুতার নিজের জীবনীতেই জানা যাক :  ‘শেখের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখলাম, তিনি ছাগলের লোমে তৈরি একটি আলখেল্লা পরিধান করে আছেন। আলখেল্লাটি দেখে আমার পছন্দ হওয়ায় মনে মনে ভাবলাম, আহা, শেখ যদি ওটা আমাকে দান করতেন! পরে তাঁর কাছে যখন বিদায় নিতে গেলাম, তিনি উঠে গুহার এক কোণে গিয়ে আলখেল্লাটি খুলে এসে আমার গায়ে পরিয়ে দিলেন এবং নিজের মাথার গোলটুপিও আমার মাথায় দিলেন। নিজে এলেন তালি লাগানো একটি পোশাকে। বিদায়কালে এগিয়ে দিতে আসা অন্য দরবেশগণ আমাকে জানালেন পূর্বাহ্ণে শেখ তাঁদের বলেছেন, মরক্কোর অধিবাসী এ আলখেল্লাটি চেয়ে নেবেন; কিন্তু তখন তিনি তা রাখতে পারবেন না। তাঁর কাছ থেকে এটি চেয়ে নেবেন একজন বিধর্মী সুলতান ও দেবেন চীনে অবস্থানরত আমার ভাই বোরহান উদ্দিনকে। তাঁর জন্যই এটি তৈরি করা হয়েছে।

পরবর্তীতে ঠিক তাই ঘটল। অতঃপর আমি চীন সফরে গিয়ে বহুদিন পরে থান্সা শহরে হাজির হলাম। সেখানে গিয়ে লোকের ভিড়ে আমি সঙ্গীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম। তখন আমার পরিধানে ছিল সেই আলখেল্লাটি। সেখানে ঘটনাচক্রে এক রাস্তায় দেখা হলো সেখানকার উজির ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের সঙ্গে। উজির আমাকে সুলতানের কাছে নিয়ে হাজির করলেন এবং সুলতানের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরকালে তিনি আলখেল্লাটির দিকে নজর দিলেন ও এটি তাঁর পছন্দ হলো। উজির তখন আমাকে বললেন, এটি খুলে ফেলুন। আমি তাঁর কথা অমান্য করতে পারলাম না। কাজেই সুলতান সেই আলখেল্লাটি নিয়ে আমাকে দশটি জামা, একটি ঘোড়া ও কিছু অর্থ দিলেন। পরের বছর খান বালিক (বেইজিং) শহরে প্রবেশ করে আমি শেখ বোরহান উদ্দিনের দরগা খুঁজে বের করলাম। দেখলাম, সেই আলখেল্লাটি গায়ে দিয়ে তিনি পড়তে বসেছেন। আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। আমাকে বিস্মিত হতে দেখে শেখ বোরহান উদ্দিন বললেন, এটি খাস করে আমার ভাই জালালুদ্দিন আমার জন্যই তৈরি করেছিলেন এবং তিনি আমাকে লিখে জানিয়েছেন অমুক অমুকের হাত দিয়ে ওটা তোমার কাছে গিয়ে পৌঁছবে। অতঃপর বোরহান উদ্দিন সেই পত্রখানা বের করলেন। সেটি পাঠ করে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শেখ জালালুদ্দিনের এ নিখুঁত জ্ঞানের পরিচয় পেয়ে আমি অধিকতর বিস্ময়বোধ করলাম। এ ব্যাপারে যা কিছু ঘটেছে, সবই আমি শেখ বোরহান উদ্দিনকে খুলে বললাম। তিনি বললেন, আমার ভাই জালালুদ্দিন এসবের চেয়েও অনেক বেশি কিছু করতে পারেন। ...আমি শুনেছি, প্রতিদিন তিনি মক্কায় ফজরের নামাজ আদায় করেন এবং প্রতি বছর হজ সম্পাদন করেন। কারণ আরাফাহ্ আর হজের সময় তিনি কোথায় নিরুদ্দেশ হয়ে যান, কেউ তা বলতে পারেন না।’

সুধী পাঠক! সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত ‘লাল সালু’ উপন্যাসটি আশা করি অনেকেই পড়ে থাকবেন। নকল মাজার ও লাল সালুর ব্যবহার আমাদের দেশে বহু আগে থেকেই প্রচলিত, যাকে এক ধরনের সামাজিক ব্যাধিও বলা যায়। কিন্তু হযরত শাহজালাল (রহ.) যে ছিলেন একজন ঐতিহাসিক সিদ্ধপুরুষ ও আল্লাহর অলি, ইবনে বতুতা কর্তৃক তদীয় সফরনামায় বর্ণিত উপরোক্ত উপাখ্যানই এর সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ। ব্যক্তিগতভাবে আমি সব সময়ই তাঁর প্রতি এক ধরনের ঋণী বলে বোধ করি এজন্য যে, আল্লাহর হুকুমে তিনি সিলেটে আস্তানা স্থাপন করে ধর্ম প্রচারে ও ধর্মান্তরিত করার কাজে আত্মনিয়োগ না করলে আমি যে সিলেটের একটি ধার্মিক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি, তা না ঘটে কোনো বিধর্মী পরিবারেও জন্ম হতে পারত এবং তেমনটা ঘটলে সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা মোটেই সহজসাধ্য হতো না। আমি তাই সওয়াব রেসানির ক্ষেত্রে মাতা-পিতা ও পিতামহের সঙ্গে তাঁকে ও তাঁর ভাগনে শাহপরান (রহ.)-কে সবসময় শরিক করি। এ প্রসঙ্গে পরিশেষে আমার পারিবারিক একটি সুখস্মৃতির ঘটনা বর্ণনা না করে পারছি না। ব্রিটিশ আমলে সিলেট যখন আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল তখন ১৯৩১ সালে আমার এক চাচা, বাবার আপন চাচাতো ভাই, আসাম সিভিল সার্ভিসে যোগদান করে ম্যাজিস্ট্রেট তথা হাকিম হন। সে আমলে এসব চাকরির জন্য নাকি কোনো লিখিত পরীক্ষা ছিল না। ইংরেজ সাহেবদের সামনে মৌখিক পরীক্ষা দিতে হতো। তো আমার সেই চাচা মৌখিক পরীক্ষা দিতে শিলং গিয়েছেন; আর এদিকে তৎকালে ধার্মিক মুসলিম পরিবারে প্রচলিত প্রথানুযায়ী আমার বাবা ও চাচারা মিলে চার-পাঁচ জন বাড়ির সামনে পিতামহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদে তেঁতুল বিচির ব্যাগসহ (গণনার সুবিধার্থে) প্রবেশ করেছেন খতমে ইউনুসের দোয়া ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জোয়ালিমিন’ ১ লাখ ২৫ হাজার বার পড়ার জন্য। পড়তে পড়তে একসময় আমার ছোট চাচা হাইস্কুলের হেড মাওলানা সাহেব একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে দেখলেন : হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারসংলগ্ন মসজিদে জুমার নামাজ হবেÑ সামনের কাতারে পরপর উপবিষ্ট শাহজালাল সাহেব আমার পিতামহ পীর মাওলানা আসগর হোসেইন ও সেই ক্যান্ডিডেট চাচা। শাহজালাল সাহেব হঠাৎ পিতামহকে জিজ্ঞেস করলেন, আজকের জুমার নামাজে কে ইমামতি করবেন? পিতামহ তখন চাচার হাত ধরে মিম্বরে বসিয়ে দিয়ে বললেন, ‘হুজুর, আজকের জুমায় মোক্তাদির ইমামতি করবে।’ স্বপ্নের বিবরণ শুনে আমার বড় চাচা সোল্লাসে বলে উঠেছিলেন, ইনশা আল্লাহ, কেল্লা ফতে। এক দিন পরই টেলিগ্রামে সুসংবাদটা পাওয়া গেল।

 

প্রসঙ্গত, মৌখিক পরীক্ষার সময় ইংরেজ সাহেব নাকি আমার ওই চাচাকে একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তার পরলোকগত পিতা কী করতেন? তদুত্তরে তিনি বলেছিলেন, He was a Hafij-e Quran. He could eecite the holy Scripture, top to bottom, from memory. এটা শুনে নাকি ইংরেজ সাহেব সবিস্ময়ে মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠেছিলেন, Oh, My God! সে আমলে পারিবারিক প্রসিদ্ধিকে প্রাধান্য দেওয়া হতো।

শেষ করছি আমার যেটা ট্রেড-মার্ক, পর্যটনসংক্রান্ত একটি খোশগল্প দিয়ে; তবে পূর্বাহ্ণে কারও কারও জন্য জানিয়ে রাখি ‘প্যাগোডা’ হচ্ছে বৌদ্ধদের ধর্মমন্দির, কারণ জোকসের সব কথা না বুঝলে বা জোকসকে ব্যাখ্যা করতে হলে জোকস আর জোকসই থাকে না : আত্মম্ভরী এক আমেরিকান মহিলা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে না গিয়েও কথার ফুলঝুরি ফুটাচ্ছিলেন। ‘আমার সবচেয়ে প্রিয় পর্যটনের স্থানগুলো হচ্ছে এশিয়ায়। হেঁয়ালিপূর্ণ, ঐন্দ্রজালিক, অবিশ্বাস্য রকমের সুন্দর। আর চায়না, অবশ্যই এশিয়ান ঝিনুকের মুক্তোসদৃশ।’ আর ‘প্যাগোডার কথা?’ পাশের একজন প্রশ্ন করলেন, আপনি কি ওদের দেখেছেন? দেখেছি মানে? মহিলা প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘আমি ওদের সঙ্গে ডিনার করেছি।’

            লেখক : রম্য সাহিত্যিক, ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক।

সর্বশেষ খবর