জাদু একজন ব্যক্তির সাফল্য ও তার পরিবারের হাসি ধ্বংস করে। আপনি পরিবার নিয়ে সুখে আছেন, সন্তানকে ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াচ্ছেন, ভালো পোশাক পরিধান করে বন্ধুদের আড্ডায় ও অফিস করছেন, মাথা গোঁজার জন্য ছোট্ট প্লট বা ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন, অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে পদে উন্নতি পেয়ে বেতনও বেড়েছে, আলহামদুলিল্লাহ দোকানে ভালো ব্যবসাও হচ্ছে। নিজেকে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার জন্য শরীরের রক্ত ভেজা ঘাম শুকিয়ে পরিশ্রম করেই যাচ্ছেন। হাজারো চেষ্টা যখন পরিবারের আত্মীয়স্বজনদের হাসিমুখে রাখার চেষ্টা করে ঠিক সেই মুহূর্তে জাদুর কবলে আক্রান্ত হয়ে মুহূর্তে থেমে যায় একজন পরিশ্রমী ব্যক্তির হাজারো স্বপ্ন আঁকা এ জীবন। ধ্বংস হয় একটি পরিবার। অন্যের সাফল্য সইতে পারে না এরকম হাজারো মানুষের সঙ্গে আমাদের চলাফেরা। প্রতেবেশী বন্ধুবান্ধব এমনকি পরিবারের আত্মীয়স্বজনরাও অন্যের জীবনে উন্নতি হোক তা মেনে নিতে খুবই কষ্ট হয়। হিংসায় পড়ে সামনে ক্ষতি করা সম্ভব নয় বলেই পরোক্ষভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা চালায়। সাফল্যতাকে প্রতিহত করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে জাদু করে। জাদুর প্রভাবে মেধাবী সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়। অফিসের সবাই ভালোবাসে তাই জাদুর মাধ্যমে পদোন্নতি ও ব্যবসার উন্নতি বন্ধ করা হয়। এমনকি জীবনহানিও ঘটার সম্ভাবনা থাকে। শত্রু আপনার সঙ্গেই। তাই নিজেকে উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে সাফল্যে পৌঁছানোর জন্য সর্বদা আমলে থাকলে কখনোই জাদুর মাধ্যমে সাফল্য আটকে রাখতে পারবে না। প্রত্যেক নামাজ শেষে ও সকাল-সন্ধ্যায় এবং ঘুমানোর আগে তিনবার সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস, আয়াতুল কুরসি পাঠ করে দুই হাতে ফুঁ দিয়ে সারা শরীরে হাত বুলিয়ে আল্লাহর কাছে জাদু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পানাহ চাইতে হবে। জাদুতে আক্রান্ত হলে নিচে উল্লিখিত দোয়াটি পাঠ করা যেতে পারে, হজরত জিবরাইল (আ.) রসুল (সা.)-কে দোয়াটি পাঠ করে ঝাড়ফুঁক করেছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে। ‘বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুজিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।’ (মুসলিম শরিফ)।
জাদুতে আক্রান্ত পরিবারটি নিমেষেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। সাফল্যের হাসি চোখের পানিতে রূপ নেয়। অবহেলা না করে দ্রুত সুস্থতার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। সুরা আরাফ, ইউনুস, ত্বহার জাদুবিষয়ক আয়াতেও ইখলাস, ফালাক, নাস পাঠ করে জাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর ও পাত্রে পানি রেখে পানিতে ফুঁ দিয়ে সেই পানি পান বা গোসল করালে ইনশা আল্লাহ রোগী সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণিত, রসুল (সা.) নিচে উল্লিখিত দোয়াটি পাঠ করে অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়ফুঁক করেছিলেন, ‘আল্লাহুম্মা রাব্বান নাসি উজহিবাল বা’সি, ইশফিহি ওয়া আনতাশ-শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিফায়ুকা শিফায়ান লা ইউগাদিরু সাকমা।’ (বুখারি শরিফ)।
সাফল্যকে বাধা দিয়ে অন্যের সুখ কেড়ে নিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না। বরং নিজে হাসিখুশি ও সুখী থাকতে চাইলে অন্যকে হাসিখুশি ও সুখে রাখতে হয়। জাদু করে অন্যের সাফল্যকে নষ্ট করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। এ পাপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। সহিহ বুখারির বর্ণনায়, রসুল (সা.) সাতটি ধ্বংসকারী জিনিস থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন। এর মধ্যে অন্যতম একটি জাদু করা। হে আল্লাহ যারা জাদু করে ধ্বংস করতে চায় তাদের হেদায়েত দান করুন এবং আমাদের জাদুর কবল থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
লেখক : ইসলামিক গবেষক